শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
সল্টলেকে হইচই। চারিদিকে শুধুই একটাই রব ‘দিলীপদা…দিলীপদা…’। চলছে প্রবল স্লোগান। বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে কর্মীদের মধ্যে উন্মাদনা কখন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বেরবেন পার্টি অফিস থেকে। রাজনীতির অলিগলিতে বারেবারে জল্পনা চলছিল দলের থেকে কি দূরত্ব বাড়ছে তাঁর? মঙ্গলবার হল যেন সব অবসান।
বিজেপি-র সভাপতিত্ব গ্রহণের পর শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে এই প্রথম সাক্ষাৎ হল তাঁর। শমীক বিজেপি-র অনেক পুরনো নেতা। দিলীপের থেকেও সিনিয়র। একসঙ্গে রাজনীতি করেছেন দু’জন। যে সময় বারবার খবরে রটছে দলের সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব নিয়ে, শমীক রাজ্য সভাপতি হতেই তা যেন মিলিয়ে গেল। অন্তত এ দিনের ছবি সেই কথাই বলল। একটি সোফায় পাশাপাশি বসে দলের দুই পুরনো নেতা কাটালেন কিছু সময়। কথা বললেন একে অপরের সঙ্গে। আর বেরিয়ে দিলীপ সাংবাদিকদের বললেন, “আমি বলেছি, আমি নয় সমস্ত পুরনো কর্মী আপনার সঙ্গে আছে। সমস্ত পুরনো কর্মী নবান্নে পৌঁছবে। সব পুরনো কর্মীরা সকলে মিলে আপনার নেতৃত্বে লড়াই করব।” বারবার জোর দিলেন ‘পুরনো কর্মী’ শব্দের উপর। দিলীপ এ দিন এও বলেন, ” যে কর্মসূচিতে আমার থাকার কথা আমি থাকি। আমি পদাধিকারী কর্মী নই। মেদিনীপুরের ভোটার আমি। সেখানে কর্মীদের সঙ্গে কাজ করছি। মেদিনীপুরের লোকও এসেছেন। আমরা জেলার সকল কার্যকর্তাও এসেছেন রাজ্য সভাপতিকে সম্মান দিতে।”
এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সবাই বিজেপি। আমাদের প্রতীক পদ্মফুল। ক্ষণিকের জন্য কোথাও ভুল হতে পারে। ক্ষণিকের জন্য কোথাও দূরত্ব তৈরি হতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয়, যে সে দলের বাইরে চলে গেছেন।” এক সময় এই দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই একাধিক নবান্ন অভিযান দেখেছে এ রাজ্য। সেই সময় তাঁর সঙ্গে দেখা যেত রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুদের মতো পুরনো নেতৃত্বদের। এখন যদিও দেখা যায় না তাঁদের। আগামী ৯ অগস্ট ফের নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি। এবার রাজ্য সভাপতি শমীক। পুরনো নতুন সব কর্মী মিলিয়ে ফের যে নবান্ন অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়বে বিজেপি সেই ইঙ্গিতই দিলেন নেতৃত্ব।
শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে সঙ্ঘবদ্ধ বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখতে পাবে। সংবাদমাধ্যম কিংবা আমাদের সমালোচক, যারা আমাদের, যারা আমাদের ঘৃণা করেন, তাঁরা বিজেপি সঙ্ঘবদ্ধতা বলে যেটা বোঝেন, আপনারা যারা রাজনীতি করে এসেছেন, এতদিন বিজেপি সংষ্কৃতিতে, আপনারা জানেন বিজেপির সংষ্কৃতি কী ? বিজেপি ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে, থাকবে। কাউকে অন্য দলের লোক বলে দাগিয়ে দেবেন না। কাউকে অন্য দলের লোক বলে দূরে সরিয়ে দেবেন না। এই লড়াই পশ্চিমবঙ্গ বাঁচানোর লড়াই। এই লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে, তৃণমূলের অমৃতরস পান করেনি, যারা চূড়ান্ত বিপরীত অবস্থায় থেকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতীককে ঘাম-রক্ত দিয়ে দেওয়ালে এঁকে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রাসঙ্গিক করেছিলেন, সেই তৃণমূল স্তরের কর্মী, যারা টিকিট কিনতে পারেননি, তাঁদেরও সঙ্গে নিন। …আগে পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচান। আগে পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করুন। এটা অস্তিত্বরক্ষার সংকট। হিন্দু বাঙালিদের জন্য শেষ নির্বাচন। জাতীয়তাবাদী মুক্তমনষ্ক প্রগতিশীল মুসলমানদের জন্য, এই নির্বাচন শেষ নির্বাচন। না হলে পরের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ঘুরে আসে, আমাদের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভিতরে,র ডিজাইনটার সঙ্গে জম্ম-কাশ্মীরের ডিজাইনটার কোনও পার্থক্য থাকবে না।”
শমীক এদিন কর্মীদের বলেন, “একজনও কর্মী যেন দলের বাইরে না থাকে। যাঁরা পরাজিত হবে জেনেও দলের পতাকা মাথায় রেখেছিলেন, তাঁরাই বিজেপি। আমরা দিনের শেষে সবাই বিজেপি কর্মী। আমাদের এখানে কোনও বেঙ্গল লাইন, দিল্লি লাইন নেই।”
দলের নতুন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে আসার পরে দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করা হয়,
এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, একুশে জুলাই তৃণমূলের মঞ্চে দিলীপ ঘোষকে দেখা যাবে এবং আজকে আপনার আসা, কারণ অনেক বিজেপি কর্মীরা, তাঁরাও একটা ধন্ধে ছিলেন, যে দিলীপ ঘোষ কী করবেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ ঘোষ বলেন, “দেখুন রাজনীতিতে ধারণা তৈরি করা, এটা একটা বড় অস্ত্র। পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতেও চলছে। আমার মনে হয়, বিজেপির কর্মীরা যাদের মনের মধ্যে একটু দোলাচল এসেছিল, একটা আশঙ্কার মেঘ ছিল, সেটা কেটে যাবে। এবং তাঁরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তন করবে। আমরা জল্পনা, কল্পনায় বিশ্বাস করি না। আমরা বাস্তবে বিশ্বাস করি। আমি স্লোগান দিয়েছিলাম উনিশ সালে। উনিশে হাফ। একুশে সাফ। একুশে সাফ হয়নি, যেটা বেঁচে গেছে, ছাব্বিশে সাফ।..বিজেপি নিরন্তর এগোচ্ছে। নির্বাচনে ভাল ফল হয়েছে। আমার ধারণা, শমীকদা আমার থেকে দলের পুরনো সদস্য। আমার যখন পার্টিতে এন্ট্রি হয়, আমি যখন (বিজেপি) রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক হই, তার আগে উনি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

.. আমি ওনার জায়গা ধরে হাঁটতে আরম্ভ করি। আমিও রাজ্য সভাপতি হই। বিধায়ক হই। সাংসদ হই। তো তিনি আমার থেকে সিনিয়র লিডার। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আছে। তিনিও বলেছেন, সবাইকে কাজ করতে হবে। তো এরপরে যেমন যেমন যোজনা তৈরি হবে, পার্টির তরফে আদেশ হবে, আমরা সবাই আছি।”