সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ফের অশান্ত ভাঙড়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চালতাবেড়িয়া এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে খুন করা হল তৃণমূল নেতাকে। দলীয় বৈঠক থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি রজ্জাক খাঁ (৩৮)। তিনি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কলকাতা পুলিশের সিপি মনোজ ভার্মা।
রজ্জাক খাঁয়ের বাড়ি ভাঙড় বাজারের মরিচা এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় বৈঠক সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর উপর হামলা চালায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে পরপর তিনটি গুলি চালানো হয়। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় তাঁকে। ঘটনার খবর পেয়ে আসে কাশিপুর থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
কে বা কারা রজ্জাককে খুন করল, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে এই হামলা কিনা, সেটা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। পুলিশ সূত্রে খবর, একসময় আরাবুল ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল রজ্জাকের। তবে ইদানিংকালে শওকত মোল্লার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে তাঁর। সব কিছু খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যদিও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
অন্যদিকে, তৃণমূলের একাংশের দাবি, জনপ্রিয়তার কারণেই এই হামলা হয়েছে। তৃণমূল অভিযোগের আঙুল তুলেছে আইএসএফ-এর দিকে। শওকত মোল্লা বলেন, “আইএসএফ আশ্রিত সমাজবিরোধীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার কারণেই রাজনৈতিকভাবে না পেরে এখন খুনের রাজনীতি শুরু করেছেন নওশাদ সিদ্দিকী”। যদিও আইএসএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মৃতের পরিবার এখনও শোকে আচ্ছন্ন। তাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের আঙুল তোলা না হলেও, তাদের বক্তব্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সইফুদ্দিন মোল্লার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। শওকত মোল্লা অবশ্য মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এবং সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।
রাজ্জাক খাঁ খুনের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন একসময়ের ভাঙ্গড়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। রাজনীতির ময়দানে দীর্ঘদিন একসঙ্গে পথচলা, একসঙ্গে মঞ্চ ভাগ, এমনকি বহুবার একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া- সেই রাজ্জাক খাঁ আজ নেই। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না আরাবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘যখন ক্ষমতায় ছিলাম, রাজ্জাক আমার ছায়াসঙ্গী ছিল। একসাথে অনেক লড়াই করেছি, অনেক পরিকল্পনা করেছি এলাকার উন্নয়নের জন্য। আজ তাকে এমনভাবে হারাতে হবে, ভাবিনি।’ রাজ্জাক খাঁ-কে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা, তবে আরাবুলের চোখে শুধুই একজন পুরনো সহকর্মীর স্মৃতি।