শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের নবান্ন অভিযান ঘিরে আজ ফের উত্তাল হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ডাকে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী আজ নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে নবান্নের পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তবে মল্লিক ফটকের কাছেই তাদের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ, যার জেরে পরিস্থিতি চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠকেও মিলল না রফাসূত্র। এখনও নিজেদের দাবিতে অনড় চাকরিহারারা। মেহবুব মণ্ডল, চিন্ময় মণ্ডল-সহ আন্দোলনকারী চাকরিহারাদের দাবি, রাতের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতেই হবে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘তালিকা প্রকাশের নির্দেশ যেমন দেওয়া হয়নি। তেমনই প্রকাশে নিষেধাজ্ঞাও নেই। তাহলে কেন তালিকা তৈরি থাকা সত্ত্বেও দেওয়া হচ্ছে না?”
সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া হোক যোগ্যদের তালিকা, বাকিদের পরীক্ষা নেওয়া হোক। এই দাবির কথা জানাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের একাংশ। সে কারণেই সোমবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেন তাঁরা। কিন্তু মাঝপথে বাধা দেওয়া হয় তাঁদের। পরবর্তীতে ২০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব, ছিলেন কমিশনার-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। মিটিং শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে যান মুখ্যসচিব। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চাকরিহারারা।
‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের কথায়, “মুখ্যসচিব আমাদের কথা শুনেছেন। নোট করেছেন। কিন্তু আমরা তো বরাবর যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা চেয়েছি। শিক্ষমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী সকলেই জানিয়েছেন তালিকা তৈরি। কিন্তু সুপ্রিম নির্দেশ নেই, এই যুক্তি দেখিয়ে তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।” এরপরই তাঁরা বলেন, তালিকা প্রকাশে তো সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞাও নেই। তাহলে কেন দেওয়া হবে না? চাকরিহারাদের সাফ দাবি, সোমবার রাতেই যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। যত রাতই হোক, তালিকা প্রকাশ্যে না এলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি যায়। নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে বলেও সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়। সেজন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনে কমিশনের তরফে মে মাসের শেষে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের একাংশ নতুন করে পরীক্ষা দিতে রাজি নন।

চাকরি হারানো ‘যোগ্য’ এসএসসি প্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে মিছিল করেন। কিন্তু পুলিশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তাঁরা যখন ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন, তখন শুরু হয় উত্তেজনা। মল্লিক ফটক এলাকায় পুলিশের গার্ডরেল ভেঙে মিছিলকারীরা এগোতে চাইলে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। পুলিশ মাইকে নিয়ম না ভাঙার বারবার আবেদন জানালেও বহু চাকরিহারা সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করেন। ফলে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। মিছিলকারীদের বক্তব্য,”আমরা ‘যোগ্য’। তবুও আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সঠিক ব্যাখ্যা চাই।”