সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
Satyajit Ray ancestral home Bangladesh—এই শব্দবন্ধ আজ বাংলার মননে বেদনার প্রতিধ্বনি। খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পৈতৃক ভিটে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সেই বাড়ি ভাঙার কাজ আংশিক ভাবে শুরু হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
বাংলাদেশে ভাঙা হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হতেই ইউনূস সরকারকে বার্তা দিল কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করা হল যে তারা যেন এই ঐতিহাসিক বাড়ি না ভাঙেন। প্রয়োজনে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে সাহায্য করবে ভারত।
ইতিহাসের প্রতি অবহেলা?
উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন বাংলার নবজাগরণ যুগের অন্যতম পথপ্রদর্শক। তিনি শুধু শিশু সাহিত্যের জনক নন, একাধারে একজন বিজ্ঞানমনস্ক মুদ্রণবিদ, সম্পাদক এবং চিত্রকরও। তাঁর সন্তান সুকুমার রায় এবং নাতি সত্যজিৎ রায় — বাংলা সংস্কৃতিকে যাঁরা বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন।
সেই ঐতিহ্যের প্রতীক, ময়মনসিংহের ওই পৈতৃক বাড়ি যদি সত্যিই ভেঙে দেওয়া হয়, তা হলে তা হবে শুধু একটি ভবন নয়, বরং ইতিহাস, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির এক মূল্যবান অধ্যায়ের অপমৃত্যু।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ
এ বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,
“রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। সেই ঐতিহ্যশালী বাড়িটি সংরক্ষণ করা উচিত।
খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত।
এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।”
তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যেন ঐতিহাসিক এই বাড়ি রক্ষা করা হয়। পাশাপাশি তিনি ভারত সরকারের কাছেও এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করেছেন।
এরপরই ভারত সরকারের তরফে এই বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব, বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে যোগকে উল্লেখ করে বলা হয় যে এই বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়। তার বদলে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করে সাহিত্য়ের মিউজিয়াম গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা দুই দেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধকেই তুলে ধরবে। ভারত সরকারের তরফে সত্য়জিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে সংস্কারের কাজে সহযোগিতার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
ঐতিহ্য সংরক্ষণের ডাক
সত্যজিৎ রায়ের এই পৈতৃক ভিটে শুধুই একটি স্থাপনা নয়, বরং দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সংযোগের প্রতীক। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই স্থানটি হতে পারত এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও পর্যটনকেন্দ্র।
স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ, সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্য রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত রাখার জন্য এই বাড়ির সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
অন্যদিকে, ঢাকার শিশু বিষয়ক আধিকারিক মহম্মদ মেহেদি জামান বাংলাদেশের সংবাদপত্র ডেইলি স্টারকে বলেন যে বিগত ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাড়িটি যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটতে পারে। তিনি জানান, এর জায়গায় সেমি-কংক্রিটের একটি বিল্ডিং তৈরি করা হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাড়িটি ১০০ বছরের বেশি পুরনো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাড়িটি সেদেশের সরকারের হাতে আসে।
Satyajit Ray ancestral home Bangladesh সংরক্ষণের দাবি আজ শুধু সাহিত্য বা চলচ্চিত্র জগতের নয়, বরং এটি দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সম্মানের প্রশ্ন। এখন দেখার, ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে রাষ্ট্র ও সমাজ কতটা ভূমিকা নেয়।