সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের একবারে প্রথম থেকে প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও নারী ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ অবদানের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মানিত ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করল জাপানের বিখ্যাত ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানিত করার জন্য কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং অধ্যাপকেরা। এই সম্মান মা-মাটি-মানুষকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে জাপান ও বাংলার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘বাংলায় আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাই ধন্যবাদ। আমি সত্যি অভিভূত। শান্তি, সম্প্রীতি, সংস্কৃতির জন্য জাপান সকলের কাছে উদাহরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য আমার শুভকামনা।’ সম্মান গ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জাপান খুবই সুন্দর দেশ। ওখানকার মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা, শৃঙ্খলা, কাজের সংস্কৃতি— অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।’ এশিয়ার প্রথম কোনও মহিলাকে সাম্মানিক ডি-লিট প্রদান করল ওয়াকামা ইউনিভার্সিটি। কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে সেই সম্মান তুলে দিল ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, দরিদ্র মহিলা ও শিশুদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন মমতা। ওকায়ামা ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট নাসু ইয়াসুতোমো এদিন উপস্থিত হয়ে জানান, ফ্রেব্রুয়ারি মাসে বিজিবিএস-এ তাঁর অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন রাজ্যের গরীব মহিলা এবং শিশুদের জন্য। সামাজিক সুরক্ষা দিতে বিশেষ করে মহিলা এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প চালু করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষ সম্মান লাভ করেছেন। তাঁর এই লিডারশিপের জন্য ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রথম এশিয়ার কোনও মহিলাকে সাম্মানিক ডি-লিট দিচ্ছে।’
বুধবার সন্ধ্যায় ধনধান্য অডিটোরিয়ামের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এই সম্মান তুলে দেন জাপানি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। রাজ্যের উপাচার্য, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রশাসনিক কর্তারা— সকলে ছিলেন উপস্থিত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্রিত হয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সম্মান পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘জাপান একটি সুন্দর দেশ। আমরা আলাদা আলাদা দেশ হতে পারি। কিন্তু আমাদের হৃদয় এক।’ আগামী বছর জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন বলেও জানালেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেছেন যে, ‘জাপান সবসময়েই মানুষদের ভালবাসে। সম্মান দেয়। ঐক্য, একতা নিয়ে কাজ করে। শিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রতি নজর দেয়। ভারতে আসার জন্য এবং এই সম্মান প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।’

১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে এটি একটি এবং জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে তো এটি অন্যতম সেরা বটেই। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলার দুই বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের এই বিশ্ববিদ্যালয় একত্রিত হয়ে কাজ করছে। এই ব্যাপারে যে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছেন, তাও প্রকাশ করেছেন। এই একত্রিত হয়ে কাজ করার ফলে দু’দেশের ছাত্রছাত্রীদের উন্নতি হবে বলে আশাবাদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেই শেষ নয়। জাপানের ভূয়সী প্রশংসা এদিন বারংবার শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জাপান খুব সুন্দর একটা দেশ। সুন্দর পাহাড় আছে। সুন্দর নদী আছে। সুন্দর জঙ্গল আছে। কী নেই ওখানে। আর আপনাদের স্বাস্থ্যও সবসময় খুব ভাল থাকে। কীভাবে আপনারা ধরে রাখেন এটা একটা শিক্ষণীয় বিষয়। তবে দুঃখের গল্পও আছে জাপানে, তার কারণ বিশ্বযুদ্ধ। তবে আপনারা জাপানকে যেভাবে গড়ে তুলেছেন পরবর্তীতে, তা প্রশংসনীয়। আমাদের ছাত্রছাত্রীরাও জাপানে গিয়ে পড়াশোনা করতে ভালবাসে। গবেষণার জন্য সেখানে যায়।’ জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলাদা দেশ হতে পারি, কিন্তু আমাদের হৃদয় এক, রক্ত এক। আমরা একে অন্যকে ভালবাসি। এটাই মানবতা। এটাই ভারত এবং বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য।’ পরিশেষে জাপানি ভাষায় ধন্যবাদ জানান তিনি।