সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“এরা তো দেশের নামও ভুলিয়ে দেবে। এটা অন্যায়। ভারতের স্বাধীনতা চিরকাল থাকবে। আমি ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি।” ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে এভাবেই প্রতিবাদ জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মকর সংক্রান্তির দিন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেন, ‘১৫ আগস্ট নয়, ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস হল ২২ জানুয়ারি।’ কারণ, গত বছর ওই দিনেই অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ভাগবতের এই মন্তব্যে ইতিমধ্যের বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কটাক্ষ করলেন এই মন্তব্যকে।
এদিন নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে বলেন, “বাংলা একসময় ভারতের রাজনীতি ছিল। পাকিস্তান, বাংলা সব এক ছিল তখন। স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তার পর পঞ্জাব। বাকিদেরও রয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের দেশ ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীন হয়। এই যে মন্তব্য করেছেন উনি, হয় জেনে করেছেন, অথবা না জেনে, আমি জানি না। কিন্তু আমি মনে করি, এটা দেশবিরোধী মন্তব্য।”
মমতা আরও বলেন, “১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট সার্বভৌম দেশের প্রতিষ্ঠা হয়। আপনারা কী মনে করেন? যে কোনও দল বা সংগঠন চাইলেই কি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, যখন ইচ্ছে পাল্টে দিতে পারে? এটা হয় না। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের গর্ব। আমাদের প্রজাতন্ত্র আমাদের গর্ব, গণতন্ত্র গর্ব আমাদের। গাঁধীজি, নেতাজি, আবুল কালাম আজাদ, বাবাসাহেব অম্বেডকর, ভগৎ সিংহ থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, চিত্তরঞ্জ দাস, মাতঙ্গিনী হাজরা, বিনয়-বাদল-দীনেশ, বাঘাযতীন, বাসন্তীদেবী…গাঁধীজিকে জাতির পিতা বলা হয়। বাংলায় বসে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছেন। সাধারণ মানুষ আন্দোলনে ছিলেন, কতশত মানুষ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমরা ভুলিনি। প্রাণে মারা যেতে হয়েছিল গাঁধীজিকে, সুভাষচন্দ্রের জন্ম আছে, মৃত্যু নেই, কী করে ভুলে যাব?”
ভাগবতের মন্তব্য নিয়ে মমতা জানান, এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’। এই মন্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মমতা জানান, স্বাধীনতার আগে তো বটেই, পরেও কতশত মানুষ জওয়ান দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এসব করে দেশের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এতে দেশের নিজস্ব পরিচিতি থাকবে না বলে মত তাঁর।
তিনি বলেন, “এরা তো দেশের নামও ভুলিয়ে দেবে? এটা অন্যায়। ভারতের স্বাধীনতা চিরকাল থাকবে। আমি ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। ধারণা ছিল না, এমন কথা কেউই বলতে পারেন। ইতিহাসের অনেক অধ্যায় বদলানো হয়েছে, সংসদে হাত তুলে সংবিধানের অনেক পাতা বদলানো হয়েছে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা বলেছিলেন জওহরলাল নেহরু, স্বামী বিবেকানন্দ। সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেসছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। আমরা তাঁদের কথা মানি। হঠাৎ হুজুগ উঠল আর সবাই মেতে উঠল তা হবে না। দেশের জন্য নিবেদিত আমরা। দেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রাণ দিতে পারি। এসব সহ্য করব না।”