সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
আজ, বুধবার থেকে নিউ টাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে শুরু হচ্ছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন বা বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট ২০২৫। বাংলায় লগ্নি টানার লক্ষ্যে বাণিজ্য সম্মেলন করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি ভারতবর্ষের প্রথম সারির শিল্পপতিদের আগমন ঘটে এই সম্মেলনে।
এবার এই অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। কিন্তু বুধবার বাণিজ্য সম্মেলনে ভুটানের রাজা কি উপস্থিত থাকবেন? মঙ্গলবার বিকেলেও এই বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার বিকেলে সম্মেলন স্থল পরিদর্শন করতে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই ভুটানের রাজা ওয়াংচুক ভারতে এসেছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশে গিয়েছেন কুম্ভমেলা উপলক্ষ্যে। কিন্তু আগামীকাল বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি কি বাংলার বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত হবেন? সম্মেলন শুরুর আগের দিনও এই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন খোদ মমতাই।
মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, “আমাকে গত অক্টোবর মাসেই ভুটানের রাজা নিশ্চিত করেছিলেন তিনি আসবনে। এখনও তিনি তো আসবেন না বলেননি। ফলে আমরা ধরে নেব তিনি আসছেন। এখন জানি না দিল্লির সঙ্গে কী কথা হয়েছে। আমরা হেমন্ত সোরেনকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”
মমতার কাছে জানতে চাওয়া হয় ভুটানের রাজার আসার ক্ষেত্রে দিল্লি বাধা দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, “আমি সেটা বলছি না। আমাকে ওনি নিশ্চিত করেছেন আসবেন। এখন শুনছি দিল্লির সঙ্গে ওনার কী কথা হয়েছে। তবে আমি চাইব উনি আসুন কারণ বাংলার সঙ্গে ভুটানের বর্ডার সংযুত্ত আছে। বেশিরভাগ অতিথিরাই চলে এসেছেন। ২০টি দেশের অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই আমাদের সহযোগী দেশ। আশা করছি সম্মেলন খুবই ভালো হবে।”
আজ থেকে অর্থাৎ ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই সম্মেলন। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক- উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে তৃণমূল সরকারের উদ্যোগে প্রথম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের সূচনা হয়। এবার অষ্টম সংস্করণে পৌঁছে গিয়েছে এই সম্মেলন। প্রতি বছরই বিপুল বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া যায় এই সামিট থেকে। এবারও পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্পোদ্যোগ ও বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আশায় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে দেশের এক নম্বর শিল্প সম্ভাবনাময় রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে যেমন পরিকাঠামো উন্নীত করেছেন, তৈরি করেছেন ল্যান্ড ব্যাঙ্ক। তারপর রয়েছে দক্ষ শ্রমিক। একজানালা নীতিও চালু করেছেন শিল্পের পরিবেশকে সহজতর করতে। বিনিয়োগ টানতে তিনি বিদেশ সফরও করেছেন। আর রাজ্যে শিল্প সম্মেলন করে বিশ্বের নজর তো কেড়েই নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এবারের সম্মেলনে নতুন বিনিয়োগের লক্ষ্য ছাড়াও গতবারের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হবে।
এবার বিজিবিএস শুরুর আগেই রাজ্যে ‘পরিত্যক্ত’ জমিগুলিতে নতুন শিল্প বা শিল্পপার্ক তৈরি করার লক্ষ্যে বিশেষ নজর দিয়েছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের লক্ষ্য স্থির করে জানিয়ে দিয়েছেন, আরও শিল্প ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আরও বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি এই বৃহৎ আয়োজন। এবার বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছে ৪০ দেশ। রাজ্যে যেমন এআই হাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, তেমনই সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে তথ্য-প্রযুক্তি, বস্ত্র ও চর্ম এবং পর্যটন শিল্পেও বিশেষ নজর দিচ্ছে রাজ্য।
বাংলায় নতুন শিল্প করিডর তৈরি হচ্ছে রঘুনাথপুর-ডানকুনি-তাজপুর, ডানকুনি-কল্যাণী এবং ডানকুনি-ঝাড়গ্রামে। এছাড়া বাংলায় রয়েছে ২২টি আইটি পার্ক। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে জোয়ার আনতে গড়ে উঠছে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি। বাংলার প্রধান প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর ও মেটিয়াবুরুজ মেগা লেদার ক্লাস্টার।