কনিষ্ক সামন্ত। কলকাতা সারাদিন।
শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে বিজেপি নেতা গ্রেফতার হলেন প্রতারণার ঘটনায়। মঙ্গলবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় কাণ্ড শুরু হয়েছে। যে বিজেপি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে থাকে সেই দলের সাংগঠনিক নেতা কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে গ্রেফতার হলেন।
টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নবারুণ নায়েক। সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর স্ত্রীও। তমলুকের মতো লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন এই নবারুণ নায়েক। যেখানের এখন সাংসদ প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুভেন্দু থেকে অভিজিৎ সকলের সঙ্গেই ছবি আছে এই নবারুণ নায়েকের।
বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নবারুণ নায়েককে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নবারুণ নায়েকের স্ত্রী তনুশ্রী রায় নায়েককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলেই এই বিশাল দুর্নীতির এবং প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ। দুটি ভুয়ো টেন্ডার দিয়ে দেড় কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় প্রতারিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তমলুক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারপর পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে প্রতারণার ঘটনা সত্যি। তখনই তাঁদের গ্রেফতার করে হাজতে ঢোকানো হয়।
এই ঘটনার পিছনে আরও কয়েকটি মাথা আছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এই টেন্ডার ও প্রতারণার সঙ্গে অসম সরকারের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। সুতরাং একটা বড় র্যাকেট কাজ করেছে এখানে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক ও তাঁর স্ত্রী ছাড়াও অসমের বাসিন্দা দীপঙ্কর ধর-সহ আরও কয়েকজনের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। কলকাতার ঠিকাদার বিশ্বজিৎ দত্ত এবং তাঁর সহযোগী ঠিকাদার ডায়মন্ডহারবারের কালীচরণপুরের বাসিন্দা ভাস্কর মণ্ডলকে কম্বল সরবরাহের দুটি আলাদা টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় নবারুণ নায়েক। আর টাকা যাতে সঠিকভাবে আসে তার লিয়াজো করেন নবারুণের স্ত্রী তনুশ্রী রায়। ওই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে নবারুণ ও তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা নেন বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হতেই একাধিকবার তমলুক থানার পক্ষ থেকে নবারুণ নায়েক ও তাঁর স্ত্রী তনুশ্রীকে জেরা করা হয়। চাপ বাড়ছে দেখে বেশ কয়েকবার হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার চতুর্থ পর্যায়ের পুলিশের জেরায় নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে যায়। আর তখনই তমলুক থানার পুলিশ বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নবারুণ নায়েক ও তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী রায় নায়েককে গ্রেফতার করে। নবারুণ অবশ্য আগে বারবার দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে এই নেতাদের গ্রেফতারের পর সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপিতে তোলাবাজ ভর্তি সেটা আমরা আগেই বলেছিলাম। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।’