সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
আগেই বলেছিলেন, মঙ্গলবার বড়মার মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর আগমন বার্তা পেয়েই তড়িঘড়ি প্রস্তুত হয় মন্দির কর্তৃপক্ষ। এদিন ডালায় শাড়ি, ফুল, মালা, মিষ্টি সব নিয়ে দুপুরে মন্দিরে পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরোহিতরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রতিমার সামনে নিয়ে যান। পুজো দেন। প্রণাম করে প্রসাদ গ্রহণ করে বেরিয়ে এসে জানান, এতদিন পর এখানে পুজো দিয়ে ভালো লাগছে। আগেই আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আসা হয়ে ওঠেনি। এবার নৈহাটি উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের পর অবশেষে এলেন।
মঙ্গলবার নৈহাটির বড়মা কালীর মন্দিরে পুজো এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড়মার কাছে মা-মাটি-মানুষের নামে পুজো দিয়েছেন, এমনটাই জানালেন মমতা। নৈহাটিতে এসেই উপ নির্বাচনে জয়ের জন্য নৈহাটিবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে ফেরি ঘাট নিয়েও বড় ঘোষণা করলেন তিনি।
নৈহাটি উপনির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী এই নৈহাটি সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ”আমি আজ এসেছি মা-মাটি-মানুষের নাম পুজো দিতে। আমি অনেক দিন ধরেই জানতাম। আমি বাই ইলেকশনে আসি না। নৈহাটির মানুষকে শুভেচ্ছা জানাই। ইলেকশনের সময় আসলে মিটিং করতে হত। মাঝে মধ্যে ফাঁকি দিতে হয়।”
বড়মার মন্দির সংলগ্ন এলাকায় একটি হাইমাস্ট লাইট লাগানো হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফেরিঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি ওই এলাকায় নানা উন্নয়নের কথা তিনি বলেন। আজ বড়মাকে শাড়ি, ফুল, নাড়ু দিয়ে পুজো দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ঘণ্টা বাজিয়ে মঙ্গলারতি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পুজো শেষ করে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার গোত্র হল মা-মাটি-মানুষ। এখানে বলে নয়, আমি সব জায়গাতেই এই গোত্রে পুজো দিই। ব্যারাকপুরে আপনারা পার্থকে জিতিয়েছেন। ও এমপি ল্যাড থেকে দুটি হাসপাতালের ওপিডির জন্য ২ কোটি করে মোট ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পাঁচ বছর আগে একটা গোলমাল হয়। মানুষের উপর অত্যাচার হয়। আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন না। তখন দু’ঘণ্টা থেকে পার্টি অফিসগুলি রঙ করে দিয়েছিলাম। পার্টি অফিস রঙ করা উদ্দেশ্য ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সাহস জোগান। শান্তি ফেরাতে তারপর নৈহাটিতে দু’বার এসেছিলাম। সেদিন আমাকে অনেক অকথা কুকথা শুনতে হয়েছিল।’
নৈহাটি পা রেখে পাঁচ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ”দু – তিনটে কাজ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে কি সন্ত্রাস হয়েছিল মনে আছে। দেখলাম ঘর থেকে একটা লোকও বেরোচ্ছিল না। যে ঘর গুলো আমাদের দখল করে নিয়েছিল আমি নিজে রং করেছিলাম পার্টি অফিসে। আমি ২ ঘন্টা বসেছিলাম নিজে থেকে যাতে আপনারা সাহস পান। ভাট পাড়া, এই জায়গা গুলোতে শান্তি ফিরে আসে। আমি সেইদিন এইজন্য এসেছিলাম।”
নৈহাটি এসে ফেরি ঘাট নিয়েও বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানালেন, ”ফেরি ঘাটটা বড়মার নামে করে দিতে বলেছি। এখানে একটা পুলিশ ফাঁড়ি হবে। আমি রাজ্যসভার এমপি লাড (লোকাল এরিয়া ডেভলপমেন্ট) থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেব ঘাটের জন্য।”
বড়মাকে শাড়ি, ফুল দিয়ে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি ঘণ্টা বাজিয়ে মঙ্গলারতি করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। পুরোহিতদের নিয়ম ও নিষ্ঠা মেনে পুজো করার কথা মনে করিয়ে মমতা বলেন, তাঁর বাড়িতেও প্রতিবছর মায়ের পুজো হয়। তাই আচার, অনুষ্ঠান সবটাই জানা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যে উঠে আসে অতীতে নৈহাটি এলাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা। কিভাবে বাবা বলে অস্থির সময় তিনি নিজে পার্টি অফিস খুলে বসে এলাকাবাসীকে অভয় দিয়েছিলেন সে কথা তিনি শোনান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন তিনি সব সময় চান ব্যারাকপুর, নৈহাটি ,ভাটপাড়া এলাকায় শান্তি বজায় থাকুক।