সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
মমতার অভিযোগ এই মান্যতা দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বাংলার লক্ষ লক্ষ ভোটারের এপিক নম্বরে ভিন রাজ্যের ভুতুড়ে ভোটার ঢোকানোর যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছিলেন তা কার্যত মেনে নিল নির্বাচন কমিশন। দেশ জুড়ে নিজেদের ভুল শোধরানোর জন্য।
একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ড। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একশো দিনের মধ্যে ভুল শোধরানোর জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে। এবার নির্বাচন কমিশন জানাল, টেকনিক্যাল টিম ও সংশ্লিষ্ট মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের (সিইও) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট এপিক নম্বর সরিয়ে ফেলা হবে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে অবশ্য নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে, এপিক নম্বর এক হলেও একজন ভোটার তাঁর সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রেই ভোট দিতে পারবেন। অন্য কোথাও নয়। এপিক নম্বর এক হওয়ার জন্য ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের ঘাড়ে পুরো দায় চাপাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কীভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন হয়, সেবিষয়ে বিবৃতি দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে কমিশন। তাদের দাবি, প্রতিটি বুথে রাজ্য সরকারের একজন কর্মকর্তা বুথ লেভেল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন।
রাজনৈতিক দলগুলোর বুথ লেভেল এজেন্ট ভোটার তালিকা যাচাই করে অভিযোগ জানাতে পারেন। বিএলও-রা ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য যাচাই করে রিপোর্ট দেন, যা পরে সংশ্লিষ্ট অফিসার পর্যালোচনা করেন।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ডুপ্লিকেট এপিক নম্বরের সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাদের বক্তব্য, ২০০০ সালে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এপিক সিরিজ দেওয়া হয়। কিন্তু, সেইসময় কয়েকজন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার সঠিক এপিক সিরিজ ব্যবহার করেননি। ফলে কয়েকটি ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেট এপিক নম্বর তৈরি হয়েছে। এতদিন তা ধরা পড়েনি, কেননা রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি স্বাধীনভাবে এই তথ্যগুলি নিয়ন্ত্রণ করত।
এদিকে, তৃণমূল এই বিষয়টিকে নিজেদের জয় হিসেবে দেখছে, কারণ তাদের অভিযোগ ছিল যে, নির্বাচন কমিশন এর আগেই এই ধরনের ভুলের ব্যাপারে সচেতন ছিল না এবং তা প্রমাণ করে তারা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এখন থেকে এই ধরনের ভুল পুনরাবৃত্তি হবে না এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা আনা হবে।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ‘নৈতিক জয়’ হিসেবে দেখছে তৃণমূল। দলের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুরদর্শিতা আবার প্রমাণিত হল। অন্য বিরোধী দলগুলি থেকে যে আমরা এগিয়ে সেটা প্রমাণিত হল। অপরাধ যে সংগঠিত হচ্ছে, তার গন্ধ পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তা নেমে এটা আটকালেন। নির্বাচন কমিশনের উপায় রইল না, ষড়যন্ত্রটাকে চালিয়ে যাওয়ার। নিজেদের কাজ ঠিকমতো এবার করতেই হবে’।