ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী, বাংলাদেশ।
সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা। এই আয়োজন শেষে বিসর্জন দিতে রাজশাহী মহানগরের পূজা মণ্ডপগুলোর প্রতিমাবাহী গাড়িগুলো জড়ো হয় পদ্মা নদীর তীরে।
লাখো-কোটি ভক্তকে বিচ্ছেদের কষ্টে ভাসিয়ে কৈলাসে স্বামীর ঘরে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা। শেষ হলো মর্ত্যে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বার্ষিক অবকাশ। ভক্তদের সঙ্গে বিচ্ছেদের বিজয়া দশমীতে তাই বেজেছে বিষণ্ণতার সুর।
একে একে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমী তিথি পার করে বিজয়ার শেষ দিনে রবিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজশাহীর সব মণ্ডপে দেবীকে বিদায় জানান ভক্ত-পুণ্যার্থীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলে নারীদের সিঁদুরের খেলা।
রাজশাহীর মণ্ডপগুলোতে সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা। এই আয়োজন শেষে পদ্মা নদীর পদ্মা নদীর প্রান্তে বিসর্জন দিতে রাজশাহী মহানগরে পূজা মণ্ডপগুলোর প্রতিমাবাহী গাড়ি জড়ো হয় পদ্মা নদী তীরে। তবে বেশির ভাগ প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয় মন্নুজান স্কুলের সামনে দিয়ে।
ঢাকে একের পর এক কাঠি পড়ছে। ভক্তরা ঢাকের তালে নাচছেন। একপাশে খই, মুড়ি, মুড়কি, জিলাপি, খেলনা আর পুতুলের দোকান। অন্যপাশে অতিথিদের বসার মঞ্চ। পাশে মন্নুজান স্কুলের সামনে দিয়ে দেবী দুর্গাকে পদ্মায় বিসর্জন দেন পুণ্যার্থীরা।
আজ রোববার শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন রাজশাহী মহানগরীতে এমন উৎসবমুখর পরিবেশে বেশির ভাগ প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয় মন্নুজান স্কুলের সামনে দিয়ে।
এ সময় পুরো এলাকাটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় থাকলেও তীক্ষ্ণ নজর রাখেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফলে প্রতিমা বিসর্জনের সময় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এবার মহানগরীতে ৭৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও মন্নুজান স্কুলসংলগ্ন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের রাজশাহী মহানগর শাখা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক ভ্যানে করে প্রতিমা নিয়ে আসছেন পুণ্যার্থী। ভ্যানের সঙ্গে ঢাকের তালে তালে নেচে নেচে আসছেন ভক্তরা। মন্নুজান স্কুলের সামনে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। ভ্যান এলেই সুশৃঙ্খলভাবে দেবী দুর্গাকে নামিয়ে আনছেন তাঁরা। এরপর সাত পাক ঘোরানোর পর দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হয় পদ্মায়।
এ সময় বাজে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি। ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলে নারীরা উলুধ্বনি দেন। শাস্ত্রমতে, শনিবারই নবমীর লগ্ন শেষ হওয়ার পর দশমীর লগ্ন শুরু হয়। পূজার আনুষ্ঠানিকতা সেদিন শেষ হলেও বিসর্জন দেওয়া হয় রোববার। দেবী দুর্গা এবার এসেছিলেন দোলায় চড়ে। আর মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামী মহাদেবের কাছে ফিরেছেন ঘোড়ায়।
মন্নুজান স্কুল এলাকায় দেবী দুর্গার বিদায়ের জন্য ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। ওই এলাকার রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি নগর পুলিশের বিশেষায়িত টিম সিআরটি সদস্যরাও দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া নৌ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্বে ছিলেন। প্রস্তুত ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও।