সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
রাজ্যজুড়ে যে ট্যাব কেলেঙ্কারি চলছে তার পিছনে রয়েছে আন্তঃরাজ্য অসাধু চক্র। মূলত রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে সক্রিয় চক্র রয়েছে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানিয়েছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। শুক্রবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফেরার পথে একই কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও।
সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ জানিয়েছেন, ট্যাব কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ৯৩টি মামলায় ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। আরও কয়েকজন এই ঘটনায় জড়িত বলেই মনে করছে পুলিশ। সেই প্রেক্ষিতে তদন্ত এগোচ্ছে।
ইতিমধ্যেই ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্তে সিট গঠন হয়েছে। সেই টিমে রয়েছে সাইবার বিশেষজ্ঞরাও। এই কাজে ডেটা এন্ট্রির কাজ কে করেছেন, থার্ড পার্টি বা বাইরের কোনও এজেন্সি রয়েছে কিনা, তদন্তে তাই জানতে চায় কলকাতা পুলিশ। আর যে পড়ুয়ারা ট্যাব প্রতারণার শিকার হয়েছে তাঁরা তাঁদের টাকা পেয়ে যাবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সু্প্রতিম সরকার। তবে তিনি এও জানিয়েছেন, হিসেব করে দেখা যাবে ৯৯ শতাংশই ট্যাবের টাকা পেয়েছেন। রাজ্যের ১ হাজার ৯১১ পড়ুয়ার সঙ্গে ট্যাব প্রতারণা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রতিম সরকার। তাঁর বক্তব্য, ”দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রাজ্য শিক্ষা দফতরের থেকে আমরা জেনেছি, প্রতিটি পড়ুয়া যারা বঞ্চিত হয়েছে, তাঁদের অ্যাকাউন্টে ট্যাবের জন্য যে নির্দিষ্ট টাকা পৌঁছনোর কথা তা পৌঁছে যাবে। সবাই নির্দিষ্ট বরাদ্দের টাকা পাবে।” টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সপ্তাহখানেক ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্যাবের টাকা বেহাত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চোপড়া থেকে এর সূত্রপাত। উত্তর দিনাজপুরের এই জেলা থেকেই প্রথম ট্যাব কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার করা হয়। এই জেলাই দুর্নীতির কেন্দ্র বলে জানা গিয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য মালদহের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় দক্ষিণবঙ্গ থেকে।
ট্যাব কাণ্ডে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের থেকে বেশকিছু নথি উদ্ধার হয়েছে, মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া জেরা করেও পুলিশ মূলত তিন রাজ্যের চক্রের সন্ধান পেয়েছে। আন্তঃরাজ্য চক্র সম্পর্কে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ জানিয়েছেন, ”সরকারি সুবিধা সরাসরি উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প থেকে অর্থ সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।”
পাশাপাশি ন্যাশনাল স্কলারশিপ বলে একটি পোর্টালের সন্ধানও পেয়েছে পুলিশ। সেখান থেকেও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ টাকা সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড ছাড়াও আরও একাধিক রাজ্যে এই ধরনের চক্র থাকতে পারে বলে অনুমান করছে পুলিশ। তবে আপাতত সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি জানিয়েছেন, যাদের টাকা বেহাত হয়েছে, তাদের নতুন করে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর সেই নির্দেশে ইতিমধ্যে টাকা ফের পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এই চক্রের হদিশ পেতে দ্রুত কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তা।