এক সময় ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর দুই ব্লকের বেলপাহাড়ি এলাকা মাওবাদীদের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত ছিল। বেলপাহাড়িতে উন্নয়ন এর চিহ্ন সে রকম ছিল না। যার ফলে মাওবাদীরা আস্তানা গেড়েছিল ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী বেলপাহাড়ি থানার ঘন জঙ্গলে। তবে অনুন্নত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল বেলপাহাড়ি। তার ফলে কাজের সন্ধানে যুবক যুবতীদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হতো।
এলাকার বাসিন্দারা কোন ক্রমে চাষবাস করে সংসার চালাতেন। রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মাওবাদীদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার আবেদন জানান। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে মাওবাদীরা সমাজের মূল স্রোতে ফেরার জন্য অস্তসহ আত্মসমর্পণ করেন।
এর বেলপাহাড়ি সহ গোটা জঙ্গল মহলে উন্নয়ন এর মাধ্যমে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই সঙ্গে অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রামকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ঝাড়গ্রাম অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বেল পাহাড়ির উন্নয়নে তিনি একাধিক কাজ করেন। বেলপাহাড়ি বেড়াতে এসে যাতে পর্যটকরা থাকতে পারেন তার জন্য তিনি একাধিক হোমস্টে তৈরি করেন।
পর্যটন স্থল গুলিতে যাওয়ার জন্য রাস্তার উন্নয়নের কাজ করেছেন। পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে পানীয় জল, বিদ্যুতেরও যেমন ব্যবস্থা করেছেন তেমনি বেলপাহাড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মনোরঞ্জন এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন । বেলপাহাড়ি থানার গাড়রাসিনি পাহাড়, জলপ্রপাত, লালজল, হদহদি, সাদা পাহাড়, কাকড়াঝোড় সহ ঘনজঙ্গলঘেরা মনোরম দৃশ্য দেখার অনেক জায়গা রয়েছে। তাই এখন আর মাওবাদী সন্ত্রাস নেই, রয়েছে শান্তি, নেই দুষনের কোন ছায়া। সেই জন্য দূষণমুক্ত বেলপাহাড়িতে শীত শুরু হতেই পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। তাই বেল পাহাড়ির আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে।
পর্যটকরা বেরপাহাড়ি ঘুরতে আসায় বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছে এলাকার ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন শিল্পকে আরো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সামনেই পঁচিশে ডিসেম্বর তার আগেই হোটেল ও হোমস্টে গুলিতে প্রায় ৮০ শতাংশ ঘর বুক হয়েছে। শীতের শুরুতে যেভাবে পর্যটকরা আসছে, তারপরে আগামী দিনে আরো বহু পর্যটক ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়িতে বেড়াতে আসবেন বলে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলা হোটেল অনার্স অ্যাসোসিনের সাধারণ সম্পাদক শিবাশীষ চট্টোপাধ্যায় বলেন এখন থেকেই বেশিরভাগ হোমস্টে ও হোটেল গুলির অধিকাংশ রুম বুক হয়ে গিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হোটেল হোমস্টেগুলির সমস্ত রুম বুক হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন বহু মানুষ দূর দূরান্ত থেকে ঝাড়্গ্রামে আসছেন বেড়াতে।
তিনি আরো বলেন যে দুর্গাপুর, কলকাতা, দিল্লী, রাঁচি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এ বছর বেড়াতে আসছেন। তাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি হয়েছে অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম।