সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“এই মুহূর্তে সঞ্জয়ের ফাঁসি চাই না। আমরা কোনদিন সিরিয়ায় তদন্ত চাইনি। সিবিআই যে তদন্ত করেছে তাতে বিশ্বাস করিনা।” এভাবেই কলকাতা হাইকোর্টে আরজি করের নির্যাতিতাকে ধর্ষণ এবং খুনে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসির আবেদনের বিরোধিতা করলেন নির্যাতিতার বাবা মায়ের আইনজীবী।
গত সপ্তাহে সোমবার যখন নিম্ন আদালত আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল তখন আপত্তি জানিয়েছিল নির্যাতিতার বাবা-মা। কিন্তু তার ঠিক এক সপ্তাহ বাদে আর ফাঁসির সাজা চাইছেন না পরিবার পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন। আরজি কর কাণ্ডে আরও জলঘোলা! ফাঁসি চায় রাজ্য-সিবিআই, চায় না নির্যাতিতার পরিবার! পরিবারের আইনজীবী শামিম আহমেদ তিনি প্রশ্ন করে বললেন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট চাইছি না। এই আবেদনের যৌক্তিকতা কী? পরিবারের বক্তব্য এটাই, এই ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় ছাড়াও আরও বহু মানুষ জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করছেন। যদি সঞ্জয়ই না থাকে তাহলে প্রশ্ন কাকে করা হবে। এমনকি সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে পরিবার একদমই সন্তুষ্ট নন। সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতি দেবাংশু বসাক রাজ্য সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, একই দাবিতে মামলা, তবে পৃথক গ্রহণযোগ্যতার মানে কী? আপাতত এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে।
নির্যাতিতার বাবা তিনি আজ হাইকোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা চাইছি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাই সামনে আসুক। সবাইকে তদন্তের আয়তায় এনে, বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা হোক। যেখানে আমার মেয়ের বিচার পাব। আমরা তার সঙ্গে আছি।”
নির্যাতিতার বাবা-মা আজ, সোমবার আদালতে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাইলেন না। তাতে অনেকেই অবাক। যেখানে রাজ্য সরকার এবং সিবিআই ফাঁসির দাবি করছে। আর নির্যাতিতার বাবা-মা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। অথচ যে ব্যক্তি তাঁদের মেয়ের সঙ্গে এত বড় কাণ্ড করল, মেরে ফেলল তার ফাঁসি চাইলেন না। এইসব ঘটনা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষ, মেয়র ফিরহাদ হাকিম আক্রমণ করেছেন নির্যাতিতার পরিবারকে। এবার সেই একই পথে হাঁটলেন তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, নির্যাতিতার পরিবার রাজনীতি করছেন।
সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। কেন এই ঘটনা বিরলের থেকে বিরলতম নয়? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে নির্যাতিতার পরিবারই তা চাইলেন না! আজ, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি নির্যাতিতার বাবা-মায়ের কাছে তাঁদের মত জানতে চাইলে তাঁরা জানান, আপাতত তাঁরা সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসি চাইছেন না।
আদালতে আজকে নির্যাতিতার পরিবারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘”আজকে উনি ফাঁসি চাইলেন না! তাহলে উনি কী চাইছেন? অন্য মহিলাদের যদি রেপ করে খুন করে, তাহলে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না। এটাই উনি চাইছেন? যেহেতু ওনার মেয়ে রেপড হয়ে মারা গিয়েছেন তাই অন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে যদি এরকম ঘটনা ঘটে, তাহলে দোষীর ফাঁসি সাজা হবে না! আসলে ওনারা এখন রাজনীতি করছেন। খুব ভাল রাজনীতি করছেন। আই অ্যাম সরি টু সে। কিন্তু নাও দে আর ইন পলিটিক্স। কমপ্লিটলি পলিটিক্স। বিকাশ ভট্টাচার্যের কথা আর ওনাদের কথা এক হয়ে গেল।”
কদিন আগে নির্যাতিতার বাবা-মাকে কড়া কথায় বিঁধেছেন ফিরহাদ হাকিম এবং কুণাল ঘোষ। মেয়র বলেন, “এখন এমন হয়ে গিয়েছে, উনি এখন যাঁদের পাল্লায় পড়েছেন, এবার ওনারা পলিটিক্স করছেন, তাকে নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী লেফটিস্টদের দয়ায় বা কারোর দয়ায় মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে নেই। বাংলার মানুষের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে রয়েছেন। আমি আবার বলব, আপনি আপনার এক্তিয়ারের মধ্যে থাকুন।” আর কুণালের কথায়, “কিছু অতৃপ্ত আত্মা এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধী, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী রাজনীতি করছে। তাদের পাল্লায় পড়বেন না। সেক্ষেত্রে এই গোটা বিষয়টাও তদন্তে আসা উচিত। ওনারা কার সঙ্গে কথা বলছেন, কারা কী শেখাচ্ছে, কেন এসব বলছেন, এই বিষয়টাই তদন্তে আসা উচিত।”