সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
”ভাষা কারও একার কেনা নয়। সকলের কাছে সকলের মায়ের ভাষা প্রিয় হবেই। তা নিয়ে বাড়তি আবেগ থাকবে।” আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশপ্রিয় পার্কের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এভাবেই মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার নিয়ে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্যে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। বহু শহীদের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকারের জন্য যে বাংলাদেশে অসংখ্য ভাষা শহীদের রক্ত ঝরে ছিল আজ সেই বাংলাদেশের পরিবর্তনের হাওয়া।
পরিবর্তনের বাংলাদেশে এই দিনটিতে ঢাকার ভাষা শহিদ উদ্যানে সে দেশের রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেও গেলেন না অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। তাঁর এই অনুপস্থিতি নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে ওপার বাংলায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন নিয়ে সেখানকার অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হলেও এবার বাংলায় তথা কলকাতায় মাতৃভাষা দিবস উদযাপন নিয়ে কোন কার অন্য দেখা গেল না বাংলার সরকারের পক্ষ থেকে। কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্কে রাজ্য সরকারের ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে নাম না করেও বাংলাদেশের এই ভূমিকার সমালোচনা শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। এবারের ভাষা দিবস উৎসর্গ করা হয়েছে ‘বাংলায় গান গাই’-এর স্রষ্টা সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীতকার প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে। মঞ্চে তাঁর ছবিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে, তাঁর বিখ্যাত গানটি গেয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে উঠে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জীবনের শেষ কয়েকদিনের কথা বলছিলেন। আজকে সুপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সরাসরি বাংলাদেশের নাম না করলেও কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “আমরা এই দিনটাকে পালন করব না, তা তো হতেই পারে না। অন্য দেশের ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না। আমরা আমাদের কথাই বলতে পারি।” অনুষ্ঠান শেষে তুললেন জোরাল স্লোগান – ‘জয় বাংলা’। বোঝালেন বাংলার জোর, বাঙালির শক্তি।

শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার পর মমতা বলেন, “প্রতুলদা তো চলে গেলেন, সঙ্গে আমি ‘বাংলায় গান গাই’ গানটাও নিয়ে চলে গেলেন। মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা আগে আমি তাঁকে দেখে এসেছিলাম। উনি তার আগে কোনও সাড়া দিচ্ছিলেন না। আমি গেলাম আইটিইউ-তে। ডাকলাম, ‘প্রতুলদা, আমি মমতা।’ আমি বললাম, ‘আপনাকে তো গাইতে হবে, সুস্থ হতে হবে। উনি হাত দুটো বাড়িয়ে ইশারায় বোঝালেন, গান আর গাইতে পরাব না।’ তবু আমার আশা ছিল প্রতুলদা সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি চলে গিয়েছেন। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে থেকে গিয়েছেন।”