শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
আশঙ্কা ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত আটকানো গেল না তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইটের বদলে পাটকেল! লাগ লাগ করে যুদ্ধটা যেন বেঁধেই গেল। তবে এই যুদ্ধ সামরিক অস্ত্রের নয়, লড়াই হবে টাকায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ, মঙ্গলবার কানাডা, মেক্সিকো ও চিনের উপরে শুল্ক চাপাতেই, পাল্টা জবাবে চিনও বড় পদক্ষেপ করল। সোজা আমেরিকাকে পাতে মারার ছক! সয়াবিন, গম, মাংস ও তুলোয় চ়ড়া শুল্ক বসাল চিন।
মোট ২১ বিলিয়ন ডলারের আমদানি শুল্ক বসাতে চলেছে বেজিং। তবে এখানেই থামেনি তারা। আমেরিকার তিনটি ফার্ম থেকে সয়াবিন আমদানির লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে চিন। পাশাপাশি আমেরিকা থেকে কাঠ আমদানিও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনের উপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর ফলে শুল্ক বেড়ে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আজ থেকেই এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে। চিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে তাদের উপরে শুল্ক বসালে, তারাও হাত গুটিয়ে থাকবে না। এদিন স্পষ্টভাবে চিন বলে যে আমেরিকা সব দেশকে ‘বুলি’ (নির্যাতন) করছে। চিন এর সামনে মাথা নোয়াবে না।
প্রসঙ্গত, আমেরিকায় উৎপাদিত সয়াবিনের প্রায় অর্ধেক পরিমাণই চিনে রফতানি হয়। ২০২৪ সালেই ১২.৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। চিনের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকা বড় বিপদে পড়বে। অন্যদিকে, ট্রাম্প ১ মার্চই আমদানি করা কাঠের উপরে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন বলেছিলেন যে কাঠের উপরে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছেন। এরপরই চিন কাঠ আমদানি বন্ধ করে দিল।
চিন আমেরিকা থেকে অন্যতম বৃহত্তম কাঠ আমদানিকারক। গত বছর ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের কাঠ আমদানি করেছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নয়া শুল্কযুদ্ধ ঘোষণার পাল্টা ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করল শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট চিন। যদি আমেরিকা যেভাবেই হোক যুদ্ধ চায়, তা সে শুল্কযুদ্ধ হোক বা বাণিজ্যযুদ্ধ কিংবা যে কোনও ময়দানে যে কোনও ধরনের যুদ্ধ চায়, আমরা শেষপর্যন্ত লড়াই চালাতে প্রস্তুত আছি।

চিন জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম্পের ফেনটানিল (একটি অতি ক্রিয়াশীল আচ্ছন্ন করার মাদক, যা মূলত ক্যানসারের যন্ত্রণা কমাতে বা অ্যানাসথেসিয়া করার কাজে ব্যবহার করা হয়) ইস্যু অত্যন্ত দায়সারা একটি অজুহাত। এর উপর দাঁড়িয়ে চিনের উপর আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কোনও যুক্তি নেই। তাই চিনা পণ্যের ওরা আমদানি শুল্ক বাড়ালে, বেজিং কর্তৃপক্ষও পাল্টা শুল্ক চাপাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশ মুখপাত্র লিন জিয়ান। তিনি আরও বলেন, চিনের পাল্টা শুল্কযুদ্ধ পুরোপুরি যুক্তিযুক্ত এবং দেশের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প এর আগে অভিযোগ তুলেছিলেন চিন ফেনটানিল সংকট মেটাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করছে না। তিনি বলেছিলেন, ফেনটানিল তৈরিতে ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক রফতানি কিছুতেই বন্ধ করছে না চিন। ফেনটানিল মেডিক্যাল কাজে ছাড়াও মাদক হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে আমেরিকায়। আফিমের আড়ক হিসাবে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অনেকের মৃত্যুও ঘটে বলে চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের। যদিও চিনা মুখপাত্রের দাবি, আমেরিকা নিজেই ওপিওড সমস্যার জন্য দায়ী।