শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“আপনাকে ভবানীপুরে হারাব। আরও ৫ বছর হারার যন্ত্রণা বয়ে বেরাতে হবে। যেভাবে নন্দীগ্রামে হাররার যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন।” এভাবেই বুধবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেন্দুর বিরুদ্ধে যে আক্রমণ করেছিলেন তার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে চ্যালেঞ্জে ছুঁড়ে দিলেন শুভেন্দু।
রাজ্য বিধানসভার ভিতরে যখন বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বাইরে ধর্না অবস্থানে বসে নিজের ‘অপরাধের’ ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার আগে কাগজ ছিঁড়ে প্রতিবাদ দেখালেন বিজেপি বিধায়করা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, ”বিরোধী দলনেতার একটাই অপরাধ ইনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০২১ সালের ভোটে মমতাকে হারিয়েছিলেন। তাঁর একটাই অপরাধ হিন্দুদের উপরে, জনজাতিদের উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তাঁর অপরাধ জয় শ্রী রাম ধ্বনি দেন, বন্দেমাতরম বলেন।”
এই প্রসঙ্গে এও বলেন, আগে তাঁর উচিত গলায় গামছা দিয়ে ক্ষমা চাওয়া! বিরোধী দল নেতা বলেন, ”এই মুখ্যমন্ত্রী আগেই গোটা পৃথিবীর হিন্দুদের অপমান করেছেন মহাকুম্ভকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলে। তাই আগে গলায় গামছা দিয়ে ক্ষমা চান। তারপর শুভেন্দু অধিকারীর দিকে আঙুল তুলবেন।” এদিকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনেও এদিন মমতাকে আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দুর বক্তব্য, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন, অপমান করেন। কিন্তু একসময়ে যখন তিনি মেদিনীপুরে দ্বিতীয় হতেন, তখন অধিকারী পরিবারই তাঁকে প্রথম করিয়েছে।
বিজেপি বিধায়কের কটাক্ষ, ””আপনি পার্সোনাল অ্যটাক করেছেন। বাপ তুলেছেন বিরোধী দলনেতার। আপনি এমএলএ-দের এদিক-ওদিক করেও বিধানসভার ভিতরে ভারতীয় জনতা পার্টির সংখ্যা সত্তরের নিচে নামাতে পারেননি। কারণ, বিধানসভার ভিতর তাঁদের বিজেপি বলে পরিচয় দিতে হচ্ছে। আপনি দিদি থেকে দিদিমা হয়ে যেতেন যদি নন্দীগ্রামের জনগণকে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম আন্দোলন না করত।” গত বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মুখোমুখি হয়েছিলেন শুভেন্দু-মমতা। সেই নির্বাচনে হেরেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তা নিয়ে আজও তাঁকে নিশানা করেন শুভেন্দু। বলেন, ৪ বছর আগের হারের জ্বালা এখনও ভুলতে পারেননি মমতা, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে চলেছেন।
বুধবার মমতার বিধানসভায় আসার বিষয়টিকেও ‘ভোটব্যাঙ্ক’ ইস্য়ু বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, এমনিতে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আসেন না, প্রশ্নোত্তর পর্বে থাকেন না, বিধানসভাকে গুরুত্ব দেন না। আর বুধবার ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে চলে এসেছেন। ‘৩৩ শতাংশ ভোট সুরক্ষিত করতে হবে। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছেন বিধানসভায়’, এই ভাষাতেই কটাক্ষ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ চারজন বিজেপি বিধায়ককে এক মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়। সে সময়ই বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, এরপর থেকে মুখ্যমন্ত্রী যখনই বিধানসভায় আসবেন তখনই তাঁকে ধিক্কার জানিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন। গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। তাই বিজেপির পূর্ব ঘোষিত সেই কর্মসূচিই চলেছে বুধবার।

এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রবেশের সময় থেকে কালো জামা পরে বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়করা। শুভেন্দুর কালো জামাকে টিপ্পনি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, “এই জামাটা আবার যেন না লাল জামায় পরিনত হয়!”
যার জবাবে পরে সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুভেন্দু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিরগিটি, রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আগে ওনার উচিত গলায় গামছা দিয়ে ক্ষমা চাওয়া, তারপরে আমার দিকে আঙুল তোলা।”