শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
জন্মের নিরিখে নাগরিকত্বের অধিকারেও এবার কোপ পড়ল আমেরিকায়। সোমবার দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই একের পর এক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ঝড় তুলেছেন তিনি। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন জন্মের নিরিখে নাগরিকত্ব প্রাপ্তিতে সীমাবদ্ধতা।
অর্থাৎ আমেরিকার মাটিতে জন্মালেই সেদেশের নাগরিকত্ব মিলবে না আর। এতে ভারতের মতো অন্য দেশ থেকে যাওয়া প্রবাসীরা সমস্যায় পড়বেন। (Donald Trump)
সোমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই একাধিক নির্দেশ কার্যকর করায় সম্মতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে জন্মের নিরিখে নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পক্ষেও সায় দিয়েছেন তিনি। বলা হয়েছে, মা-বাবা জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক না বলে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা শুধুমাত্র আমেরিকায় জন্মেছে বলেই নাগরিকত্ব পাবে না। মা-বাবার মধ্যে অন্তত একজনকে আমেরিকার নাগরিক হতে হবে, অথবা আমেরিকার সেনায় যুক্ত থাকতে হবে। তবেই আমেরিকার মাটিতে জন্মানো তাঁদের সন্তান সেদেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। (Donald Trump on US Birthright Citizenship)
ট্রাম্প সরকারের এক আধিকারিক বলেন, “বেআইনি এলিয়েনদের সন্তান আমেরিকার মাটিতে জন্মালেই তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না। বেআইনি এলিয়েনদের পরিচয় যাচাই করার প্রক্রিয়াও আরও শক্তপোক্ত করে তোলা হবে। অবিলম্বে বেআইনি প্রবেশ বন্ধ হবে। লক্ষ লক্ষ বেআইনি এলিয়েনদের তাঁরা যেখান থেকে এসেছেন, ফেরত পাঠানো হবে সেখানে।”
এ যাবৎ আমেরিকায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান ছিল। অর্থাৎ আমেরিকার মাটিতে কোনও শিশু জন্মালে আপনা আপনিই সেদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হতো সে। মা-বাবা অন্য কোনও দেশের নাগরিক হলেও, তাঁদের সন্তানের সেই অধিকার ছিল। ১৮৬৮ সালে সেই নিয়ম কার্যকর হয় আমেরিকায়। এমনকি সেই আইন পরবর্তীতে সংশোধন করা হলেও, মূল নীতিতে পরিবর্তন ঘটানো হয়নি। এবার সেই নীতি থেকে সরে এলেন ট্রাম্প।
আগেও একাধিকবার ওই নীতির সমালোচনা করতে দেখা যায় ট্রাম্পকে। তাঁর যুক্তি ছিল, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের নীতি হাস্যকর। এতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা আরও উৎসাহ পান। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এই নীতি তুলে দেব আমরা। অত্যন্ত হাস্যকর নীতি এটা।” ভারত এবং চিনের মতো দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এই নীতির অপব্যবহার করেন বলেও দাবি করেন ট্রাম্প। নিজের সেই অবস্থানই এবার খাতায় কলমে কার্যকর করলেন ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্প যদিও নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করেছেন। নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু আইনি বাধা রয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানও সংশোধন করতে হবে, যা দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের দুই কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে।
তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণায় আতঙ্কিত অভিবাসীরা। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও উদ্বেগ ধরা পড়েছে। কারণ আমেরিকায় ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যাই সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। ২০২৪ সালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়র সংখ্যা ৫৪ লক্ষের বেশি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১.৪৭ শতাংশ। যত অভিবাসী রয়েছেন আমেরিকায়, তাঁদের ৩৪ শতাংশেরই জন্ম সেদেশের মাটিতে, প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। তাই ট্রাম্পের নীতি কার্যকর হলে, H-1B ভিসা নিয়ে সেখানে কাজ করতে যাওয়া মানুষজন, যাঁরা গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। প্রতিবছর আমেরিকায় অভিবাসী পরিবারগুলিতে যে হাজার হাজার শিশু জন্মায়, তাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সেখানে বসবাসকারী ভারতীয় দম্পতিদের সন্তানও আমেরিকার নাগরি হিসেবে গণ্য হবে না।