সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বাংলার প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠল। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠালেন আইনজীবী।
সোমবার চাকরিহারাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই রায়ে তাঁর হৃদয় ভেঙে গেছে। পাশাপাশি, এই রায়ের পিছনে ‘অন্য কোনও খেলা’ রয়েছে কিনা, সেই সন্দেহও প্রকাশ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির কথা কি ভুলে গেছেন? নিটেও তো কেলেঙ্কারি হয়েছে। তবে সেসবে তো কারও চাকরি যায়নি। শুধু বাংলাতেই কিছু হলেই চক্রান্ত? রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এই রায়ের পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই তো?’
এসএসসি মামলার সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য রাজ্যজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। এবার জানা গেল, তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে কী শাস্তি হতে পারে? জানা যায়, আদালত অবমাননা আইন, ১৯৭১ অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, দু’হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। তবে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি আদালতের কাছে সন্তোষজনকভাবে ক্ষমা চান, সেক্ষেত্রে আদালত তাঁর শাস্তি মকুবও করতে পারে।
উল্লেখ্য, গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টও ২০১৬ সালের এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিল করেছিল। যদিও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল, তবুও প্রায় ২৬ হাজার চাকরিজীবীর চাকরি রক্ষা করা যায়নি। যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব না হওয়ায় শীর্ষ আদালত ২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহাল রাখে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ্য প্রার্থীদের পাশে থাকার বার্তা দেন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সূত্র ধরেই এবার তিনি আদালত অবমাননার নোটিশ পেলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জনৈক আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্তের কাছ থেকে এই নোটিশ এসে পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে আজ সকালে সেই নোটিশ শেয়ার করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেছেন? নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে তিনি সংবিধানকে অবমাননা করে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে অমান্য করে এমন কথাবার্তা বলেছিলেন! একজন মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ কি এইরকম? আজ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ যথাযথভাবে জারি করা হয়েছে। আমি এটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি এবং স্বাগত জানাই। যে কেউ—এমনকি একজন মুখ্যমন্ত্রীও—যে সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান করে তাকে অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ । এক্স হ্যান্ডলে পোস্টে তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস দিলেন এক আইনজীবী।
1) এসএসসির রায়ের চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে চাকরিসুরক্ষার চেষ্টা করছেন, তাতে জটিলতা তৈরি করে প্রক্রিয়ার গতি কমানোর চক্রান্ত। চাকরিহারারা কী চান? মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা সফল হোক, আপনাদের চাকরি বাঁচুক; নাকি এসব আইনি জট পাকানোর চক্রান্তকারীরা জটিলতা বাড়াক। অবস্থান নিন আপনারা।
2) রামবাম ভোটে পারে না, কোর্টে জট পাকায়।
3) মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থায় সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন। বিচারপতিদের সম্মান দেন। কিন্তু কোনো রায়ে ন্যায়বিচার না হলে বা বহু মানুষের ক্ষতি হলে, সেই অংশ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার কোনো সম্পর্ক নেই। মনে রাখবেন, বিচারপতি চাকরি ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হতে গেলেও সাধারণ মানুষের চোখে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।”