সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
চাকরিহারা শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে যোগ্য এবং অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে এসএসসি৷ সেই তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে বলে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে হওয়া বৈঠকে চাকরিহারা শিক্ষকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে৷ আগামী ২১ এপ্রিল আইনি পরামর্শ নিয়ে সেই তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে৷ শুধু তাই নয়, চাকরিহারা শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়েও আইনি পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য সরকার৷
এ দিন বিকাশ ভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ এসএসসি এবং স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের ১৩ জন প্রতিনিধি৷ সেই বৈঠকে মূলত তিনটি দাবি তোলেন শিক্ষকরা৷ তার মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবি মেনে নেয় রাজ্য সরকার৷ শুধু তাই নয়, ২২ লক্ষ ওএমআর প্রকাশের দাবিও মানা হয়েছে৷ তবে ওএমআর-এর মিরর ইমেজ তাদের কাছে নেই বলে এসএসসি-র পক্ষ থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের জানানো হয়েছে৷ সিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে আদালতে যে মিরর ইমেজ জমা দিয়েছে, আইনি পরামর্শ নিয়ে সেই মিরর ইমেজই এসএসসি-র কাছে রয়েছে৷ যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন তিনি যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে আছেন, এ দিন ব্রাত্য বসুও সেই কথাই জানালেন আলোচনা সভার শেষে। তিনি বললেন, আলোচনায় যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে, তাতে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শিক্ষা দফতর বা এসএসসির প্রতিনিধিদের মতের খুব একটা ফারাক হয়নি। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বললেন, “ওদের দাবির সঙ্গে আমাদের কোনও মৌলিক বিরোধ নেই। কিন্তু আইনি পরামর্শ ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আগামী দেড় সপ্তাহের মধ্যেই যোগ্য অযোগ্যের তালিকা প্রকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে।” এরই পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী চাকরিহারাদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আরো বলেন, ” ওরা ( চাকরিহারা) রাজপথে থাকতে চান, ওদের সঙ্গে আমিও সহমত। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারলে ওদের পথে থাকাই উচিত। আমরা আইনি পরামর্শ নিয়ে চেষ্টা করব। সেই সময়টা পর্যন্ত দেখে নিন। ২১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”
তবে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের নিশানা করতে ছাড়েননি শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীরা চাইছেন, এই ২৬ হাজার লোককে বলি দিয়ে ভোটের আগে রাজ্যে একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে। আমরা বলতে চাই, আপনারা আপনাদের রাজনীতি করুন। আমরা চেষ্টা করছি, এই মানুষগুলোকে শেষ মুহূর্তে অক্সিজেন দেওয়ার। সেটা আটকাবেন না।’’
বৈঠক শেষে শিক্ষকরা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা থাকায় এখনই তাঁরাস্কুলে যেতে পারবেন না৷ তবে চাকরিহারা শিক্ষকরা বেতন পাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় কাটেনি৷ বৈঠকে অংশগ্রহণকারী চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষকদের এক প্রতিনিধি বলেন, আমাদের স্যালারি পোর্টাল খুলে দেওয়া হয়েছে৷ বেতন দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে৷
চাকরিহারা শিক্ষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করলেও এখনই তাঁরা আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসছেন না৷ শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে এসএসসি-র চেয়ারম্যান, মধ্য শিক্ষা পর্ষদের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন৷
চাকরিহারাদের এক প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের আলোচনা হয়েছে। দুটো পার্টে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দাবি যেগুলো ছিল সেগুলো নিয়ে। আর একটা আইনি বিষয় নিয়ে। আমরা বলেছিলাম, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা সার্টিফাই করে পাবলিশ করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে এসএসসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা ওরা ইতিমধ্যে তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে। পরের রবিবারের মধ্যে হয়ত হয়ে যেতে পারে। আইনি পরামর্শ নিয়ে সোমবার নাগাদ সেটা পাবলিশ করবেন। পরের সপ্তাহের সোমবার। সম্ভবত ২১ তারিখ।”

তিনি আরও বলেন, “আর ২২ লক্ষ যে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন, তাঁদের ওএমআর পাবলিশের কথাও আমরা বলেছি। ওঁরা বলেছেন, সেটা তো আছে। আইনি পরামর্শ নেবেন। যদি ওঁরা পজিটিভ বার্তা দেন যে কোনও অসুবিধা নেই, তাহলে অবশ্যই সেটাও পাবলিশ করা হবে। যেটা আমরা বলেছিলাম, মিরর ইমেজ। যেটা ওঁরা জানালেন, মিরর ইমেজ তো নেই। কারণ মিরর ইমেজ থাকলে সিবিআই নিশ্চয়ই খুঁজে পেত। যেটা আছে এখন, সেটা অ্যাকর্ডিং টু সিবিআই। মানে, সাবমিটেড বাই সিবিআই। সেই মিরর ইমেজটা আছে। যদি সেটা মনে হয় তাহলে সেটা ওঁরা দেবেন। এই তিনটে দাবি আমাদের ছিল। এই তিনটের উত্তর ওঁরা দিয়েছেন। আর আইনি পরামর্শের ক্ষেত্রে, রিভিউ বা কিউরেটিভ যাই হোক…প্রথমে তো রিভিউ হবে, রিভিউয়ে যাওয়ার আগে কী ধরনের আলোচনা হবে সেটা আমাদের সঙ্গে যেন আলোচনা করেন। একসঙ্গে বসে। সেটায় ওঁরা রাজি হয়েছেন।”