শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপদ্রুত রাজ্যের জন্য যে আইন কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছিল সেই আফস্পা এবার বাংলাতেও সীমান্তবর্তী চার জেলাকে উপদ্রিত ঘোষণা করে জারি করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে চিঠি পাঠালেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো।
মুর্শিদাবাদ কাণ্ডের জেরে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। যেখানে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আফস্পা জারির আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বাংলায় হিন্দুদের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের তুলনা টেনেছেন বিজেপি সাংসদ।
ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে অশান্তির আগুনে জ্বলছে মুর্শিদাবাদ। এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নতুন করে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে খবর। সেই আবহেই আফস্পা জারির দাবি তুললেন জ্যোতির্ময়। তাঁর বক্তব্য, “এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাকে নেহাত অরাজকতা বললে কম হয়। বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশানা করা হচ্ছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের তুষ্টিকরণের রাজনীতি এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তাই এর জন্য দায়ী।”
জ্যোতির্ময় অভিযোগ করেছেন, সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাস হওয়ার পর যেভাবে হিংসা ছড়িয়েছে, তাতে আইনশৃঙ্খলার প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে সকলের সামনে। সশস্ত্র ভিড় হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে, এমনকি পুলিশবাহিনীও। কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর নির্দেশ দিয়েছে। এতে প্রশাসনিক ব্যর্থতা স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে লেখা হয়েছে, “গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদেই হিন্দুদের ৮৬টি বাড়ি ও দোকানে লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে। খুন হয়েছে দুই সাধারণ মানুষ। তাঁদের পানের বরজেও হামলা করা হয়।” বিজেপি সাংসদের দাবি, “এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মালদহ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা তৃণমূলের তোষণ রাজনীতির ফল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা যে ভেঙে পড়েছে তা ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদী আন্দোলনের ফলে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। এই জেলাগুলিতে হিন্দুদের পরিস্থিতি ১৯৯০ সালের কাশ্মীরি হিন্দুদের গণপলায়নের ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে।”
আরও এককদম এগিয়ে জ্যোতির্ময় চিঠিতে লিখেছেন, “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আজ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের যেভাবে ভীতিপ্রদর্শন করা হচ্ছে, যেভাবে তাঁদের একঘরে করা হচ্ছে, যেভাবে তাঁদের উপর হিংসা প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রস্থানের মিল পাওয়া যাচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ না করলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে, তবে এবার আর উপত্যকায় নয়, বাংলায়।”
জ্যোতির্ময়ের আফস্পা চালুর এই দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “এগুলো কিছু না। এখন রাজনীতির সময় নয়। পুলিশ-প্রশাসন জায়গা ঠিক করুক। আমরা রাজ্য প্রশাসনের উপর ভরসা রাখছি। অপরাধী অপরাধীই। পুলিশই অপরাধীদের ঠান্ডা করতে পারে। কারও সর্বনাশ, কারও পৌষ মাস। ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে বিজেপি।”
আফস্পা কী?
সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা বলতে সকল কর্তৃত্বের উপরে বোঝায়। এই আইন জারি হলে যে কোনও ধরনের দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। যা বাহিনীকে অনেক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা দেয়। নাগা পাহাড় এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে এই আইন প্রয়োগ করা হয়।