সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“কিছু কাজ দায়সারা ভাবে করা হচ্ছে। এটা চলবে না।” এভাবেই আজ আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন ডেড লাইন মেনে কাজ করতে হবে। কাজে কোন রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসনিক সভা থেকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের প্রশাসনিক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য প্রত্যেকটা কাজে নজরদারি করবে। সমন্বয় পোর্টালের মাধ্যমে নজরদারি চালাবে সরকার। আলিপুরদুয়ারে ৩০ টি প্রকল্পে দেরি হয়েছে সরাসরি অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সবাই জানতে চান এই দেরির কারণ কী?
আলিপুরদুয়ারে একাধিক প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ের শেষ হয়নি। বিশেষ করে একাধিক জল প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যায়নি। কেন নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হলো না তা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার আলিপুর দুয়ারের প্রশাসনিক সভা থেকে জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেকটা কাজের নজরদারি হচ্ছে। ভাববেন না, কলকাতা থেকে আলিপুর দুয়ারের খুব দূরত্ব বেশি। এক সেকেন্ডে যোগাযোগ করা যায়। সমন্বয় পোর্টালের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটা কাজের নজরদারি করি।”
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, “গভর্মেন্ট প্রকল্পের জন্য কাউকে এক পয়সা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার বলছি- কমপ্লেন এলে অ্যাকশন নেব। এফআইআর করা হবে।
পুরো জেলার উন্নয়নের তালিকা হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৪৪১টি প্রকল্পের মধ্যে ৩০৩ টি শেষ হয়েছে। ১০৮টি প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ হয়নি। ৩০টি প্রকল্প ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যে শেষ হয়নি।এরপরই একে একে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের দাঁড় করিয়ে ক্লাসের কড়া দিদিমনির স্টাইলে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান জানতে চান, “কেন মানুষের উন্নয়নের কাজ সময়ে শেষ হল না? কে দায়ী? কার গাফিলতিতে এগুলো সময়ে শেষ হল না?” খানিক থেমে প্রশ্ন তুলেছেন, “মুখ্যসচিব যদি একদিন জেলায় এসে পাঁচ, ছ’টা জায়গায় যেতে পারে তাহলে বিডিওরা পারবেন না কেন?” প্রসঙ্গত, বুধবার মালদহর সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সরকারি কাজের তদারকি করতে এবার থেকে সপ্তাহে একদিন গ্রামে ফিল্ড ওয়ার্কে যেতে হবে বিডিও-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
মনে করিয়েছেন, সময়ে কাজ শেষ করতে পারেননি বলে এখন তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করে ফেলবেন, এমনটা যেন না হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “মানুষের কাজে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করব না। কোয়ালিটি কাজ চাই। মনে রাখবেন, আপনারা কাজ করার পর আমরা কিন্তু থার্ড পার্টিকে দিয়ে ভেরিফিকেশন করিয়ে থাকি।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রকল্পের জন্য কোন টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই উপভোক্তাদের। কেউ যদি সরকারি প্রকল্পের জন্য টাকা চায় থানায় অভিযোগ জানান। রাজ্য সরকার সামাজিক প্রকল্পের জন্য কোন অর্থ চাপায়নি উপভোক্তাদের কাছ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে কাউকে পয়সা দিতে হবে না। রাজ্য সরকার পরিষেবা পৌঁছে দেবে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে।
অন্যদিকে, সরকারি ব্যানারের ভাষা নিয়ে এবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি ব্যানার এবং পোস্টারের ভাষা সংযত হতে হবে বলে জানালেন তিনি। সরকারি আধিকারিকদেরও সতর্ক করলেন তিনি। জানালেন, তাঁদের ভুলের মাশুল সরকার দেবে না। সেক্ষেত্রে সরকারও কড়া পদক্ষেপ করবে। বৈঠক চলাকালীন এদিন নিজের মোবাইলে তোলা একটি ছবি তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি যে গেস্ট হাউসে আছি, সেখান থেকে একটি ছবি তুলে আনলাম। মুখ্যসচিবেকও দেখাব। দেওয়ালে লেখা রয়েছে, ‘অনধিকার প্রবেশকারী বা পাচারকারীদের গুলি করে মারা হবে’। এটা কোনও ভাষা হল? আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা বলা উচিত। অনেক সময় সাধারণ মানুষ, যাঁরা জানেন না, তাঁরাও জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকে পড়েন। তাঁদের উপর অত্যাচার হয়। আমার কানে কিন্তু আসে।”
মমতা আরও বলেন, “নিশ্চয়ই যাওয়া উচিত নয়। হাতির দল আছে। তারা তাণ্ডব চালাতে পারে। হাতির সংখ্যা বাড়ছে বলে কেন্দ্রকেও জানিয়েছি, আমরাও দেখছি কী করা যায়। কিন্তু ভুল করে যদি কেউ ঢুকে পড়েন, তাতে আপনারা কখনও কখনও স্ট্রং অ্যাকশন নেন, যা মানুষের পছন্দ নয়। মনে রাখবেন, বন, অরণ্য, সবুজের উপর মানুষেরও অধিকার রয়েছে। সমাজে সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। যেভাবে বাঘ ধরেছেন আপনারা, আমি তার প্রশংসাও করেছি। কিন্তু আলিপুরদুয়ার থেকে কিছু অভিযোগ পেয়েছি আমি।”
এর পর মুখ্যসচিবকে বলতে বলেন মমতা। তাতে মুখ্যসচিব জানান, জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় পিকনিক হয়, যার উপর জীবন-জীবিকাও নির্ভর করে। কিন্তু সেই পিকনিক না করতে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। সরকারের সঙ্গে কথা না বলে কে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রশ্ন তোলেন মমতাও। জয়গাঁওয়ে স্থানীয়দের পুজো-উৎসব কে বন্ধ করতে বলল, প্রশ্ন তোলেন তিনি। আধিকারিকদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনাদের লোক চেনে না। আমাদের চেনে। আপনারা যদি ভুল করেন, ইচ্ছাকৃত ভুল করেন যদি, আমাদের উপর দায় আসে। তাহলে আমরাও ছেড়ে কথা বলব না।”
যদিও জঙ্গলে ওই ব্যানার লাগানো নিয়ে এর পরই সাফাই দেন স্থানীয় আধিকারিক। তিনি জানান, ওই এলাকায় বায়ুসেনার জমি রয়েছে। রাজ্য প্রশাসন নয়, বায়ুসেনার তরফেই ওই ব্যানার টাঙানো হয়, যাতে অনধিকার প্রবেশে গুলি চালানোর কথা লেখা হয়। স্থানীয় এসপি বা জেলাশাসকের সঙ্গে কথা না বলে বায়ুসেনা ওই ব্যানার লিখে আটকাল কী করে প্রশ্ন তোলেন মমতা। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।