দীপ্তেশ গায়কোয়াড়। কলকাতা সারাদিন।
ছেলের অফিসের সামনে প্রকাশ্য গুলি করে খুন করা হল মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী ও অজিত পাওয়ার ঘনিষ্ঠ এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে মুম্বইয়ে।
জানা গেছে, শনিবার রাতে নির্মল নগরে নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি চালানো হয়।
সেই মানুষ, যিনি শাহরুখ খান ও সলমন খানের দীর্ঘ সময়ের দ্বন্দ্ব মিটিয়েছিলেন। দুই খানকে আবারও বেঁধেছিলেন বন্ধুত্বের বাঁধনে। এমন প্রিয় মানুষের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে বিচলিত সলমন।
এক সময় এমন ছিল যখন শাহরুখ-সলমন একে অন্যের ছায়া থেকেও দূরে থাকতেন। শোনা যায়, তাঁদের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল ২০০৮ সালে। ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তবে বাবা সিদ্দিকির ডাকেই তাঁর ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন শাহরুখ ও সলমন। সেখানেই দুজনের অভিমানের বরফ গলে যায়। আলিঙ্গনে মিটে যায় যাবতীয় তিক্ততা। এর পরও একাধিকবার বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন শাহরুখ ও সলমন। এমন মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়েই লীলাবতী হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন সলমন। সূত্রের খবর, রিয়ালিটি শো ‘বিগ বস’-এর শুটিং সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি। এদিন বাবা সিদ্দিকির মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে যান শিল্পা শেট্টি, সঞ্জয় দত্ত, জাহির ইকবালরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন শিল্পা।
গাড়িতে ওঠার আগেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। বিষয়ট দেখতে পেয়ে তাঁকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এখনও পর্যন্ত তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের বান্দা এলাকায় থাকা ছেলে ও বান্দা-পূর্ব এলাকার বিধায়ক জিশানের অফিসের কিছুটা দূরে রাত ৯.৩০ নাগাদ গাড়িতে ওঠার সময় আচমকা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুই দুষ্ক়তী। এই ঘটনার পরেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, তিনটি গুলির একটি সোজা তাঁর বুকে গিয়ে আঘাত করে। তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক ব্যক্তি এই ঘটনার ফলে জখম হয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানান তিনি এই বিষয় পুলিশ ও হাসপাতালের চিকিৎসদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি জানান, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই হামলার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন উত্তরপ্রদেশ ও অন্যজনের বাড়ি হরিয়ানা বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আরেক ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমি পুলিশকে এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এই ঘটনার ফলে কেউ যাতে আইন-শৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে না নেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। কোনও ভাবে এই ঘটনার জন্য মুম্বইয়ে যাতে গ্যাং ওয়ারের সৃষ্টি না হয় সেদিকে ও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
এই ঘটনার খর পেয়েই লীলাবতী হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছেছেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। অন্যদিকে, নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে টুইট করে, এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে ঘোষণা করেছেন মহারাষ্ট্রের আরেক জন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারও। অত্যন্ত প্রিয় একজন সহকর্মী ও বন্ধুকে হারিয়েছেন বলে নিজেক শোক জ্ঞাপন করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাবা সিদ্দিকি বান্দা-পশ্চিম বিধানসভা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৪৮ বছর ধরে কংগ্রেসে থাকার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি অজিত পাওয়ারের এনসিপি গোষ্ঠীতে যোগ দনে।
এরপর অগাস্ট মাসে তাঁর ছেলে জিশানকে কংগ্রেসকে বরখাস্ত হয় করা হয়। মহারাষ্ট্র নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বাবা সিদ্দিকির এই মৃত্যুর ঘটনা ভোটে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। গত এক সপ্তাহের মধ্য অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীর দুই নেতাকে খুন হতে হল। তার মধ্যে একজন হলেন সচীন কুর্মি ও অন্যজন বাবা সিদ্দিকি।