সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে আদালত। আপাতত এটা স্বস্তি। ওদের বেতন নিয়ে চিন্তা করছিলাম আমরা। কারণ আগের রায় অনুযায়ী, বেতন দেওয়া যেত না। আমরা বিকল্প পথের সন্ধান করছিলাম। আমাদের সরকার কথা দিয়েছিল। ওদের যাতে অসুবিধা না হয়, আমাদের সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে।” বৃহস্পতিবার বাংলার এসএসসি প্যানেলের ২০১৬ সালে চাকরি পাওয়ার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকছে বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পরেই এভাবে তাদের আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আমি কথা দিয়েছিলাম আমরা দেখব যাতে ওদের কোনও অসুবিধা না হয়। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছে আদালত। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা সময় পেয়ে গেছি। অনেকে বলছেন, এটা ২০২৬-এও যাবে। এটার কোনও প্রশ্নই নেই। দেখবেন এই বছরের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। আমি খুশি যে আপাতত একটা সময় পেয়ে গেছি। এটা একটা বড় স্বস্তির খবর। শিক্ষকরাও সঠিক সময়ে মাইনে পাবেন। একটা স্বস্তিও যদি হয় তাহলে বড় স্বস্তি হয়। শিক্ষকদের বলব আপনারা মন দিয়ে ক্লাস করুন। প্ররোচনায় পা দেওয়ার দরকার নেই। আইনজীবীরা এলে ওঁদের সঙ্গে কথা বলব। সমস্যা সমাধানে সময় দিতে হয়। আইনের প্রতি বিশ্বাস-ভরসা রাখুন। নিশ্চয়ই কোনও পথ খুঁজে আমরা বের করব। অপেক্ষা করুন।”
গত তিন এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাংলা প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশের পরেই সুপ্রিম কোর্টে তাদের চাকরি বহাল রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। বৃহস্পতিবার পর্ষদের সেই আবেদনের শুনানি হয়েছে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে যাদের ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি কেবলমাত্র এমন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই স্কুলে যেতে পারবেন। নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষকদেরই স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
যোগ্য-অযোগ্যের বিচার হবে কী করে, কতদিন এই অবস্থা চলবে, তা নিয়েও এদিন নিজের অবস্থান জানান মমতা। তিনি বলেন, “অনেকে বলছেন, ২০২৬ পর্যন্ত যাবে। প্রশ্নই নেই। এ বছরের মধ্য়েই সমাধান হয়ে যাবে। যদি আপনারা সবাই পাশে থাকেন। আমরা যেটা করব, আশাকরি ভুল করব না। কারণ মানুষের কাজে ভুল করি না আমি। কথা বলতে গিয়ে উচ্চারণে ভুল হয়, আমি ভাল হিন্দি জানি না, আমি ইংরেজি জানি না। আমি স্বীকার করছি, আমি এলিট ক্লাসের নই। আমি ওঁদের শ্রদ্ধা করি যদিও। আপাতত কিছুটা সময় পেয়েছি আমরা। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্তত যথা সময়ে বেতন পাবেন। এটা একটা বড় স্বস্তির খবর।”
চাকরিহারাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “একটা স্বস্তি যখন হয়, ভবিষ্যতের স্বস্তি তার উপর নির্ভর করে। সুতরাং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুরোধ, মন দিয়ে কাজ করুন। চিন্তা করবেন না। আমরা আমাদের সমব্যথী, সহসাথী। আপনাদের বেদনায় আমাদেরও বেদনা।”
শিক্ষকরা আপাতত কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও, শিক্ষাকর্মীদের কী হবে জানতে চাইলে মমতা বলেন, “আমাদের যা করণীয় করব। আমার উপর ছেড়ে দিন বিষয়টা। আমাদের আইনজীবীদের দিল্লি থেকে আসতে দিন। ওঁদের সঙ্গে বসব, কথা বলব। সমস্যার সমাধান করতে সময় লাগে। তাড়াহুড়োতে কারও কথায়, প্ররোচনায় পা দেবেন না। আইনের প্রতি ভরসা রাখুন, আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন। আইনের সাহায্যে কোনও না কোনও পথ খুঁজে বের করব। ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন।”

অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদ পরিদর্শনে কি তিনি যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে তিনি সেখানে যাবেন না। এও বলেছেন, তাঁর মনে হয় এখন স্থানীয় কেউ ছাড়া কারও এলাকায় যাওয়া উচিত নয়। কেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেছেন, ”শান্তির বাতাবরণ ফিরে এসেছে। এখন কাজ হচ্ছে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা। সেই কাজ আগে করতে হবে। সেটাই প্রশাসন করছে। আমিও তো যেতে পারতাম, যাচ্ছি না কেন? কারণ আছে। আমি ঠিক সময়ে যাব। আমি অনুরোধ করব রাজ্যপাল সহ বাকিদের যাতে তাঁরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করেন।” তিনি আবারও অভিযোগের সুরে বলেন, বাইরে থেকে কেউ কেউ এসে অত্যাচার করেছে, উর্দিধারীরাও আছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। আইনি পথে সমাধান বের হবে।