সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“আমি সমস্ত কিছু শুনেছি। রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারকেই এই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট দেব।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ উপেক্ষা করেই গতকাল প্রথমে মালদহ এবং আজ মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে গিয়ে নিহত বাবা ছেলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দিলেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদে ‘খুন’ হয়েছিলেন সম্পর্কে বাবা-ছেলে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস। সেই ঘটনায় এখনও অবধি মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যদিও মৃতের পরিবারের দাবি, প্রচুর লোক ওই হামলার সময় জড়ো হয়েছিল। এদিন এলাকা পরিদর্শনের সময়ে রাজ্যপালকে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা জানান এলাকার বাসিন্দারা। জানান, তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে ক্রমাগত। এলাকা ছেড়ে চলে না গেলে ক্ষতি করা হবে বলে ভয় দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর এও দাবি, বিএসএফ যতদিন আছে ততদিন তাঁরা সুরক্ষিত। তাঁরা চলে গেলেই ফের হামলা হতে পারে তাঁদের ওপর। তাই স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্পই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
ধুলিয়ানে নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করলেন তিনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। রাজ্যপাল সকলেরক সঙ্গে দেখা করেন এবং গোটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, “মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে। তাঁরা আমায় অভাব, অভিযোগ জানিয়েছেন। আমার সঙ্গে থোলা মনেই তাঁরা কথা বলেছেন। আমি সমস্ত কিছু শুনেছি। রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারকেই এই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট দেব। এবং তাঁরা যেন ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানাব। পরবর্তীকালে এই সংক্রান্ত বিষয় কতটা এগোলো তাও নজরে রাখা হবে।” রাজ্যপাল আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে প্রথমেই শান্তি ফেরানোর বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছেন, রাজ্য সরকারের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ করা। এছাড়া আক্রান্তদের রাজভবনের পিসরুমের ফোন নম্বর দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, স্থানীয়দের বিএফএফ ক্যাম্পের দাবি শুনে তিনি বলেন, মানুষ কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তা বোঝা যাচ্ছে। তাঁরা অনেক পরামর্শ দিয়েছেন এবং সেগুলি বিবেচনা করা হবে।

অন্যদিকে, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে হিংসার আগুন জ্বলেছিল মুর্শিদাবাদে। সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অশান্তিতে ঘরছাড়া হয়েছেন বহু মানুষ। সেখানেই হাজির জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল। আজ শনিবার বেতবোনায় মহিলা কমিশনের সদস্যরা পৌঁছন। সব হারিয়ে প্রতিনিধি দলের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুর্গতরা। হাড়হিম করা অভিজ্ঞতার কথা শোনান মহিলারা। এলাকায় বিএসএফ ক্যাম্প চাই। না হলে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফেরা যাবে না। সেই দাবিও তোলা হয়েছে প্রতিনিধি দলের কাছে। আজ শনিবার সামশেরগঞ্জের বেতবোনায় পৌঁছয় জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান বিজয়া রাহাতকারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। তাঁদের আসার আগেই ওই এলাকায় ভিড় করেছিলেন ঘরছাড়া দুর্গতরা। বিজয়া রাহাতকার ও অন্যান্য প্রতিনিধিদের দেখে মাটিতে শুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুর্গতরা। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। এখান থেকে ফিরে গিয়ে দিল্লিকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হবে। সেই কথা কমিশনের তরফে দুর্গতদের বলা হয়েছে। বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় আছে। সে কথা বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে। এদিন প্ল্যাকার্ড হাতে কমিশনের সদস্যদের সামনে জড়ো হয়েছিলেন দুর্গত মহিলারা। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার আবেদনও জানানো হয়। প্রসঙ্গত, এই বেতবোনা এলাকায় প্রবল হিংসার আগুন দেখা গিয়েছিল।

জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন, “কেউ তাঁর স্বামী হারিয়েছেন, কেউ আবার সন্তান হারিয়েছেন। মানুষদের টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে এনে খুন করা হয়েছে। এই দৃশ্য আগে কখনও বাংলা দেখেনি। নৃশংসতার চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। এইসব বরদাস্ত করা উচিত নয়।”