শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“আমরা বদলা চাই, ২৬-এর বদলে ২৬০ টা মুন্ডু চাই। আমরা চাই গাজার মতো পাকিস্তান শেষ করতে। ২৬০ জিহাদিকে মেরে বদলা নিয়ে দেখাক ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানের মদতে পরিকল্পিত হামলা, পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দেওয়া উচিত।” এভাবেই আজ কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত বিতান অধিকারীর বাড়িতে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় কেন্দ্রের মোদির সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল সহ দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তার প্রেক্ষিতে এদিন শুভেন্দু বলেন, “কাঁচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেনার গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখুন। আমরা বদলা চাই, ২৬-এর বদলে ২৬০ টা মুন্ডু চাই। আমরা চাই গাজার মতো পাকিস্তান শেষ করতে। ২৬০ জিহাদিকে মেরে বদলা নিয়ে দেখাক ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানের মদতে পরিকল্পিত হামলা, পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দেওয়া উচিত।
ভারতীয়-হিন্দু বলেই খুন করা হয়েছে। ডেমোগ্রাফি দেখে কাশ্মীর যান। যেখানে হিন্দুর সংখ্যা বেশি সেখানে ঘুরতে যান। যা মুর্শিদাবাদ, তাই কাশ্মীর। মুর্শিদাবাদে বাড়িতে ঢুকে হিন্দুদের ওপর হত্যা। হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে কুপিয়ে খুন কেন? কেন পুলিশ পালিয়ে গেল মুর্শিদাবাদে, কেন লুকিয়ে পড়ল দোকানে?”
পাকিস্তানের পতাকা পোড়ালেন শুভেন্দু
পহেলগাঁওয়ে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে সারা দেশ। তার প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার বিধানসভার গেটে দলের অন্যান্য বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ঠিক সেই সময় পাকিস্তান বিরোধী স্লোগানও দিতে দেখা যায় শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্য বিধায়কদের।
জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে নিহতদের মধ্যে ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বিতান। ছুটিতে দেশে ফিরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে গেছিলেন। বছর চল্লিশের বিতান ফ্লোরিডার থাকতেন। কাজ করতেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়। বিতানের পৈতৃক বাড়ি বেহালায়। বাড়ির ছোট ছেলে। নেতাজিনগর থানা এলাকায় বৈষ্ণবঘাটা লেনে বিতানের আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন তাঁর স্ত্রী ও সাড়ে ৩ বছরের ছেলে। বিতানের বড় হয়ে ওঠা দুর্গাপুরে। বাবা ছিলেন দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের কর্মী। ছোটবেলায় পড়তেন দুর্গাপুরের হর্ষবর্ধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর শিবাজি হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৮-এ দুর্গাপুরের বিসি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে টিসিএস-এ চাকরি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন। খবর পেয়ে স্কুলের মাঠে জড়ো হয়েছিলেন বিতানের ছোটবেলার বন্ধুরা।
জঙ্গিদের গুলিতে সন্তানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি। যে সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৬৪ সালে ওপার বাংলা থেকে এপারে এসেছিলেন বীরেশ্বর অধিকারী। এত বছর পর নিজের দেশে সেই সন্ত্রাসেরই বলি হল তাঁর সন্তান। নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারী বলেছেন, দিন কাউকে একজনকে দিন। বলছে, যারা যারা মুসলিম তারা সরে যান, কালমা পড়ুন, আর মেরে দিল। যাদের কপালে সিঁদুর দেখেছে…মেরে দিল।
নিহত বাঙালি পর্যটকের বাবা বীরেশ্বর অধিকারী বলেন, সব কিছু ছেড়ে এখানে এসে গেলাম পশ্চিমবঙ্গে। সেটা কী ভাবতে পেরেছি আবার ৫০-৬০ বছর পরে আমারই ঘরে আবার এরকম হয়ে গেল। আমি ভাবিনি এই দেশে সেটা (হিন্দু বিদ্বেষ আসবে। লোকের মনোবৃত্তি কিছুই পাল্টায়নি, সব একই রয়ে গেল। মার্কিন মুলুকে থাকলেও শিকড় ভোলেননি বিতান। বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ছোট ছেলে। এবার কী হবে? ভেবে আকুল সন্তানহারা দম্পতি।

নিহত বাঙালি পর্যটকের মা মায়া অধিকারী বলেন, আমাদের কেউ নেই পৃথিবীতে। আমাদের দু’জনকে ওষুধপত্র, অন্ন জোগানো মেডিক্লেম, কখন কোথায় অপারেশন হবে না হবে…সব দূরে থেকে দেখত। কেন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন ভগবান?