রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
দলের প্রবীণ মহিলা নেত্রীকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার পাশাপাশি খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলো বিজেপির মন্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগ নয় রীতিমতো থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বিজেপির মন্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার পাশাপাশি খুনের হুমকি অভিযোগ দায়ের করলেন সোনারপুরে বিজেপির মহিলা নেত্রী অনিতা ঘোষ ।
বিজেপির নবনির্বাচিত মন্ডল সভাপতি এর বিরুদ্ধে দলের নেত্রীকেই এমন হেনস্থা করার অভিযোগ দায়ের হতেই রীতিমতো অস্বস্তিতে বিজেপির যাদবপুর সংগঠনিক জেলা তথা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
আগামী বছর ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেখানে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র সহ দক্ষিণ 24 পরগণাকে রীতিমতো টার্গেট করেছে বিজেপি, এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিন 24 পরগণায় সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভার অন্তর্গত এলাকাতেই বিজেপির নবনির্বাচিত মন্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে দলের নেত্রী অনিতা ঘোষকে হেনস্থা করার অভিযোগ আসতেই কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাজ্য নেতৃত্ব।
অন্যদিকে তৃণমূলের নেতৃত্বের অভিযোগ, "বিজেপি যে মহিলাদের সম্মান জানাতে শেখেনি তা আরো একবার প্রমাণিত হলো বিজেপির প্রাক্তন মন্ডল সভানেত্রীর সঙ্গে বর্তমান মন্ডল সভাপতির এই দুর্ব্যবহারের ঘটনায়।"
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের যে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি দুর্দান্ত ভালো ফল করে তৃণমূলের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে, সেই নির্বাচনের সময়ও সোনারপুর 4 নম্বর মন্ডলের সহ-সভানেত্রী ছিলেন অভিযোগকারীনি অনিতা ঘোষ ।
দলের নবনির্বাচিত মন্ডল সভাপতি দলের দুই নেত্রীকে খুনের হুমকি এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার পরে বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল কে ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ জানানো সত্বেও অগ্নিমিত্রা পাল অথবা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ অভিযোগকারীদের।
কী ঘটেছে?
সোনারপুর থানা এলাকার অন্তর্গত এবং সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায় কালিকাপুর তেমাথা অঞ্চলের বাসিন্দা তথা সোনারপুর চার নম্বর বিজেপি মন্ডলের প্রাক্তন সহ সভানেত্রী অনিতা ঘোষ সোনারপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, "গত ০৭-০৫-২৫ বুধবার আনুমানিক সন্ধ্যে আটটা নাগাদ আমাকে ফোন করে বিদ্যাধরপুর নিবাসী দেবাশীষ মন্ডল, ডাক নাম কার্তিক, পিতা অনন্ত মন্ডল। কনফারেন্সে থাকে দক্ষিণ সাঙ্গুর নিবাসী সত্যজিৎ নস্কর ডাকনাম সত্য। রাজনৈতিক আলোচনার নাম করে অকথ্য ভাষায় নোংরা গালিগালাজ করে প্রমাণসহ একাধিক তথ্য রয়েছে। এমনকি বাড়ি গিয়ে খুনের হুমকি ও শ্লীলতাহানির হুমকি দেয়। সেই সময় আমার সাথে থাকে আমারই বন্ধু (সোনারপুর ৪ নম্বর মণ্ডলের আরেক বিজেপি নেত্রী) বাড়ি চাকবেড়িয়া।
এমতাবস্থায় মাননীয় মহাশয় আমরা প্রতিটা মুহূর্তে প্রাণহানির আশঙ্কায় ভুগছি, দয়া করিয়া আমাদের আইনত্ব ভাবে সাহায্য করুন। নিম্নে হুমকি কারীর নাম এবং ফোন নাম্বার ও বিবরণ দেওয়া হইল দেবাশীষ মন্ডল ও সত্যজিৎ নস্কর।"

অভিযোগকারীনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অনিতা ঘোষ কার্যত ভেঙে পড়ে বলেন, “যবে থেকে ভোট দিতে শিখেছি তবে থেকে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছি। মোদি-জিকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসানোর জন্য লড়াই করেছি। অথচ এই দেবাশীষ মন্ডলের মতো তৃণমূলের নেতারা হঠাৎ করে বিজেপির কার্যকর্তা হয়ে গিয়ে রাতারাতি আমাদের উপরে ছড়ি ঘোরানোর পাশাপাশি অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করছে এবং খুনের হুমকি দিচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো সত্বেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না। যারা কোনদিন দেওয়াল লিখলো না, শাসক দলের অত্যাচারের মুখে পড়তে হলো না – তারাই এখন নেতা।”

প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগেই বিজেপির রাজ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে স্থানীয় নেতা-নেত্রী বা কর্মীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই দেবাশীষ মন্ডলকে সোনারপুর এলাকায় মন্ডল সভাপতি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। এরপর থেকেই এলাকার পুরনো বিজেপি কর্মী এবং নেতা-নেত্রীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আনুগত্য প্রকাশের জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে দেবাশীষ মন্ডলের বিরুদ্ধে।