সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
গত লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে মুখ থুবরে পড়ে বিজেপি। ভোটের পরে বিজেপির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। অন্তত বিজেপির সদস্য সংগ্রহের নিরিখে সেই পরিসংখ্যান সামনে আসছে। বিশেষ করে সদস্য সংগ্রহে বিজেপির পরিষদীয় দলেরই পারফর্ম্যান্স খুবই খারাপ। এর জবাব জানতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিধানসভার বিরোধী দলনেতা (LoP) শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikary) বিধায়কদের (MLA) নিয়ে বৈঠক (Meeting) করতে বলেছিলেন।
কিন্তু ওই বৈঠকে প্রায় অর্ধেক বিধায়ক এলেনই না। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই ঘটনায় শুভেন্দুর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকট। যার ফলে চাপে শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সব চেয়ে খারাপ অবস্থায় বিজেপির পরিষদীয় দল। একাধিকবার এই নিয়ে সমালোচনা করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাতেও সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও উন্নতি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের পর বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করতে শুভেন্দুকে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকও হয়। কিন্তু ওই বৈঠকে ৬৬জন বিধায়কদের মধ্যে আসেন মাত্র ৩৪ জন। এটাকে ভালো ভাবে নেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, এতে শুভেন্দুর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকট হচ্ছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গোপনে খবর পেয়েছে, বিধায়কদের অনেকে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিধায়ক শুভেন্দুর ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় নেতারা তৎপর হয়েছেন। তাঁদের কাছে খবর, পরিষদীয় দল ভেঙে যেতে পারে। তৃণমূলে চলে যেতে পারেন অনেকে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য বিজেপির কাছে পরিষদীয় দলের সদস্য সংগ্রহ হিসাব সহ বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলেন। বিজেপি সূত্র জানা গিয়েছে, এই প্রেক্ষিতে বিধায়কদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করতে পারেন বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশল।
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি দিল্লিতে যে হিসেব পাঠানো হয়েছে তা এইরকম, বিজেপি বিধায়কদের সদস্য সংগ্রহ নিজের এলাকায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক কম। আরামবাগের গোঘাটে বিজেপি গত লোকসভায় ভোট পায় ১০২৭৫০টি অথচ সেখানে সদস্য সংগ্রহ হয়েছে -৭৯২০টি। নন্দীগ্রামে ভোট প্রাপ্তি ১১২১১০ , সদস্য সংগ্রহ – ১১৮৬৬। কোচবিহারের শীতলকুচিতে বিজেপি ভোট পেয়েছে ১১৩৩৫৭টি। সেখানে সদস্য সংগ্রহ হয়েছে ৬৪১২টি। দার্জিলিংয়ে প্রাপ্ত ভোট ৮৭ হাজার ২৫২ ও সদস্য সংগ্রহ হয়েছে ৬০৪১টি।
জলপাইগুড়ির নাগড়াকাটায় প্রাপ্ত ভোট-৭৯ হাজার ৭৩২ , সেখানে সংগ্রহ হয়েছে মোটে ৩ হাজার ১৭১ সদস্য। আরামবাগ, খানাকুলে মোট প্রাপ্ত ভোট ১০৭১৬৬, সেখানে সদস্য সংগ্রহ হয়েছে ১৩৫৪৫টি।
আগামী বিধানসভা ভোট (২০২৬) আর দেড় বছর বাকি। তার আগে পরিষদীয় দল যাতে না ভেঙে যায় তার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা সবরকমের চেষ্টা শুরু করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তিত গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।