শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
জল্পনা চলছিলই। লোকসভায় ভোটাভুটির পর, আলোচনার জন্য ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিলটিকে এবার পাঠিয়ে দেওয়া হল যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। জেপিসিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে। অন্যদিকে, এক দেশ-এক ভোট বিল খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্র যে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়তে চলেছে, সেই কমিটিতে থাকতে পারেন কেরলের ওয়ানড় থেকে প্রথমবার সাংসদ হওয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা ছাড়াও আরও ৩ কংগ্রেস সাংসদকে ওই কমিটিতে রাখতে পারে কেন্দ্র। দলের তরফে তাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি লোকসভা সাংসদ মনীশ তিওয়ারি ও সুখদেও ভগত এবং রাজ্যসভার সাংসদ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা ওই কমিটির সদস্য হতে চলেছেন বলে খবর।
এখন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা ভোট হয় বিভিন্ন সময়ে। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের মেয়াদ শেষ হলে, লোকসভা ভোট! এই ব্যবস্থাটিকে এবার বদলে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার লোকসভায় এই সংক্রান্ত বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল। যে বিলের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিরোধীরা। ভোটাভুটি হয়।
এদিকে ভোটাভুটি কেন্দ্রের পক্ষে বেশি ভোট পড়লেও বিলটি পাস করানো যায়নি। কারণ, সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করতে গেলে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্য়াগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। এখন সংসদের উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ এনডিএ-ই। কিন্তু রাজ্যসভা, এমনকী লোকসভাতেও তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যখন সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সর্বস্তরে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। আমার মনে হয়, সংসদে বেশি সময় নষ্ট না করে,বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো উচিত। যৌথ সংসদীয় কমিটিতে সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। যৌথ কমিটি রিপোর্টের ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার যখন ফের পাঠাবে, তখন আবার আলোচনা তো হবেই’।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কমিটি ‘এক দেশ, এক ভোট’ সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করেছিল। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচন বিজেপির ইস্তাহারে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, এই নীতি দেশে চালু হলে ভোটের খবর কমবে। পাশাপাশি ভোট চলাকালীন নির্বাচনী আচরণ বিধির জেরে সরকারের কাজ থমকে থাকবে না। বার বার ভোট হলে উন্নয়নমূলক কাজ যায়। সরকারি কর্মীদের উপর থেকেও ভোটার তালিকা তৈরি ও ভোট সংক্রান্ত কাজকর্মের চাপ কমবে। এই তিন বিলের সাহায্যেই একই সময় লোকসভা এবং সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা, পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে উদ্যোগী বিজেপি সরকার।