সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে রাস্তা আটকে আন্দোলন না করে সেন্ট্রাল পার্কের ভিতরে সুইমিং পুলের পাশে সীমিত সংখ্যক আন্দোলনকারী নিয়ে আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির এই নির্দেশের পরে রাত কাটতে না কাটতেই বিধাননগর পৌরসভার পক্ষ থেকে চাকরি হারা আন্দোলনকারীদের জন্য সেন্ট্রাল পার্কের মধ্যে ব্যবস্থাপনা শুরু করার কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যতক্ষণ না সেন্ট্রাল পার্কের ভিতর সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত হবে ততক্ষণ তারা বিকাশ ভবনের সামনেই রাস্তা আটকে বসে থাকবেন।
বিকাশের বাড়িতে চাকরিহারারা
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বারে বারে দীর্ঘ বছরের পর বছর মামলা লড়ে বাংলার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল করতে সফল হয়েছেন সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি নিজে যে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল করিয়েছেন তার কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য দাবি করেছেন বারে বারে। শনিবার সকালে আন্দোলনরত চাকরিহারাদের একাংশ দেখা করতে গেছিলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে। আইনজীবী তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ”আপনারা কেউ চাকরি ফিরে পাবেন না। আপনাদের নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে, তার জন্য তৈরি হন।” একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন বিকাশ। তাঁর সাফ কথা, সরকার চাকরিহারাদের ভুল বোঝাচ্ছে। রিভিউ পিটিশন করেও কোনও লাভ হবে না। চাকরিহারাদের ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল এদিন বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছিল। তাঁদের আরও একটি বিষয় বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। বলেছেন, যোগ্য-অযোগ্যদের যে তালিকায় ৭ হাজার ২৫০ জনের কথা বলা হচ্ছে সেই সংখ্যাও নাকি ঠিক নয়। বিকাশের দাবি, আরও বেশ কয়েকজন রয়েছে এই অযোগ্য তালিকায়। ফলত সবমিলিয়ে বিকাশের বাড়ি থেকে নিরাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে চাকরিহারাদের।
শিক্ষা মন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি চাকরিহারাদের
আজ, শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী সোমবারের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ করতে হবে। অন্যথায়, বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। একইসঙ্গে, নিজেদের সমস্যা তুলে ধরে রাজ্যের সব সাংসদকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষকরা।
দীর্ঘদিন ধরে ইমেল এবং চিঠি পাঠিয়েও শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়ায় এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চাকরিহারাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাদের দাবি নিয়ে উদাসীন।
শনিবারই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চাকরিহারা শিক্ষকরা জানান, তাঁদের ইস্যু এবার সংসদে তোলার ব্যাপারে সমস্ত সাংসদদের সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেবেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সোমবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলতে হবে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করতে চান চাকরিহারারা। কোনও সদুত্তর না পেলে আবারও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। চাকরিহারা শিক্ষকরা জানিয়েছেন, রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের যত সাংসদ আছেন, তাঁদের সকলের কাছেই নিজেদের বক্তব্য লিখে চিঠি দেওয়া হবে। এই চিঠিতে তাঁদের সমস্যা নিয়ে রাজ্যে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করার দাবি জানানো হবে, যেখানে কেমন করে চাকরি ফেরানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে। শুধু রাজ্যেই নয়, সংসদেও যাতে এই বিষয়টি ওঠে, তার জন্য সাংসদদের কাছে তাঁরা আর্জি জানাবেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের এক প্রতিনিধি বলেন, “আমরা শেষ ১৬ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বা অন্য কোনো মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। আমরা সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর সদুত্তর না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।”

নতুন অবস্থানস্থলে শিক্ষকদের জন্য যেন উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা হয়, সে দাবিও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের এই চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার সোমবারের মধ্যে চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে কোনো সমাধানসূত্র বের করে কিনা, নাকি আন্দোলন আরও জোরালো হয়।