সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
চাকরি ফেরত পেতে মরিয়া চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা কার্যত প্রশাসন ও বিশিষ্টদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। এবার তাঁদেরই একাংশ পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরবারে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সম্মুখ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে কোনও খবর সামনে আসেনি। তবে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলেই জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, আজ সকালে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের একটা অংশ কালীঘাট থানায় যায়। সেই দলে মোট ৫০ জন শিক্ষক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা পুলিশের কাছে অনুমতি চান, যাতে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়।
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদলকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়। সেই হিসাবে পাঁচজন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকা মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে যান। জানা গিয়েছে, তাঁরা একটি সাত দফার স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। সেই স্মারকলিপি গ্রহণ করেছে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির কার্যালয়।
অন্যদিকে, সোমবার আন্দোলনকারী চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন সরকারের প্রতিনিধি। ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা যে চিঠি দিতে চেয়েছেন সঠিক পদ্ধতিতেই তা গ্রহণ করতে দপ্তরের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। রবিবার একথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, চাকরিহারাদের মধ্যে তিনটি পক্ষ রয়েছে। তাঁদের কেউ, কেউ আন্দোলন করছেন, একাংশ সরকারের উপর ভরসা করছেন। আবার অন্য অংশ আন্দোলনেই নেই। ব্রাত্য বলেন, “সরকার চাকরিহারা সব শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সরকার সহযোগিতা করতে চাইছে। যদি ওঁরা আলোচনা করতে চান তাহলে, ঠিক পদ্ধতিতে চিঠি দিন। ওঁরা একটা কথা বলেছে, আমরা শুনেছি। আমাদের দপ্তরের পক্ষ থেকে আগামিকাল (সোমবার) কেউ না কেউ যোগাযোগ করবেন। যে চিঠি দিতে চেয়েছেন সঠিক পদ্ধিতেই তা গ্রহণ করতে দপ্তরের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।”
চাকরিপ্রার্থীরা আগে ই-মেল করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। আগামী সোমবারের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি করেছিলেন তাঁরা। না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা। সেই বিষয়ে আজ ব্রাত্য জানান, “আমি একাধিকবার ওঁদের সঙ্গে বসেছি। চিঠিতে উল্লেখ নেই কেন ওঁরা বসতে চেয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার যোগাযোগ করা হবে।”
উল্লেখ্য, এদিনই চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের একাংশ কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। পুনরায় পুরীক্ষা না দিয়েও কীভাবে হকের চাকরি ফেরত পাওয়া যায়, কীভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়ে দিশা পেতেই অভিজিতের কাছে যান তাঁরা। রবিবার বিজেপি সাংসদ তথা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসভবনে এলেন শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল। সেখানে দুইপক্ষের দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। মূলত, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে কীভাবে আইনি পথে যাওয়া উচিত। সেই নিয়েই তাঁদের পরামর্শ দেন অভিজিৎ। এই প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ বলেন, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তবে আবেদনকারীরা আদালতে যেতেই পারেন, তাঁরা তাঁদের অনুরোধও রাখতে পারেন। মানবিক দিক থেকে যদি আদালত তাঁদের আবেদন গ্রহণ করে, তাহলে তো ভালোই। কিন্তু এই নিয়ে আমরা এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না।
এর আগে একই কারণেই প্রবীণ আইনজীবী তথা বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’রা। কিন্তু, বিকাশরঞ্জন তাঁদের জানিয়ে দেন, এভাবে আন্দোলন করে লাভ হবে না। চাকরিহারা ‘যোগ্য’দের আবারও পরীক্ষা দিতেই হবে। সেই পরীক্ষায় পাস করলে তবেই ফেরত পাওয়া যাবে হারানো চাকরি।