সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
এনআরসি-র আতঙ্ক ফের দানা বাঁধছে বাংলাজুড়ে। কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসীর নামে এনআরসি নোটিস জারি হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে প্রাপ্ত এই নোটিস ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। আর এই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন,”আমি হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি জেনে যে, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, এনআরসি নোটিশ জারি করেছে। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বাংলার বাসিন্দা। তাঁর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে “বিদেশি/অবৈধ অনুপ্রবেশকারী” সন্দেহে হয়রানি করা হচ্ছে।
এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটিই প্রমাণ করে যে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনো ক্ষমতা বা অধিকার নেই। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখানো, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং নিশানা করার একটি পূর্বপরিকল্পিত নোংরা চক্রান্ত চলছে। এই অসাংবিধানিক আগ্রাসন জনবিরোধী এবং এটি বিজেপির বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রকে দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক সুরক্ষাকে ধ্বংস করে বাংলার মানুষের পরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সমস্ত বিরোধী দলগুলির একজোট হওয়া এবং বিজেপির বিভাজনমূলক ও দমন পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি। ভারতবর্ষের সাংবিধানিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হলে, বাংলা চুপ করে থাকবে না।”
অসমে এনআরসির নামে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের হয়রানি নিয়ে এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য-রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলা বলার জন্য ভিন রাজ্যে গিয়ে লাগাতার হেনস্তার শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা। এ নিয়ে আগেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওড়িশা, গুজরাট সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এমনকি বাংলাদেশে পুশব্যাক করার মতো ঘটনাও ঘটছে। সেই আবহে এমন ঘটনায় ফের সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে সেই জানুয়ারি মাসে। ডাকযোগে একটি চিঠি পান কোচবিহার জেলার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী। প্রথমে তিনি বিষয়টা বুঝতে পারেননি। পরবর্তীতে জানতে পারেন, ওই চিঠি এনআরসির নোটিস, যা পাঠানো হয়েছে গুয়াহাটি থেকে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন উত্তমকুমার ব্রজবাসী। এনআরসি নোটিসে উল্লেখ, ভেরিফিকেশনের জন্য আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁকে অসমের কামরুপে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে হাজিরা দিতে হবে। দেখাতে হবে ভারতীয় হওয়ার প্রমাণপত্র। কিন্তু উত্তমবাবুর দাবি, তাঁরা অসম থেকে এসেছেন ঠিকই। বংশ পরম্পরায় বাংলার বাসিন্দা। কেন আচমকা নতুন করে তাঁকে সেসব প্রমাণ দাখিল করতে হবে, তা বুঝতেই পারছেন না।

এই প্রসঙ্গে সোমবারই মুখ খোলেন তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তিনি জানান, উত্তমবাবুর মতো একজন ভারতীয় নাগরিককে এইভাবে নোটিস পাঠানো প্রমাণ করে যে, বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এনআরসি ব্যবহার করছে।