সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
পহেলগামের বিভীষিকার পরে ফের কাশ্মীরকে ঘিরে আশার আলো দেখাতে এলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। বৃহস্পতিবার পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন তিনি।
শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, কাশ্মীরকে ঘিরে রাজ্য ও কেন্দ্রের ভূমিকা, নিরাপত্তা, পর্যটনের পুনরুদ্ধার এবং পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়— সব মিলিয়ে ঘরোয়া অথচ তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনায় বসলেন দুই মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে তিনি অবশ্যই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কাশ্মীরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওমর বলেন, “দিদি সবসময় আমার পাশে ছিলেন। পহেলগাম হামলার পর তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানি সেনার গোলাগুলিতে সীমান্ত এলাকাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, সেই সমস্ত এলাকাও ঘুরে দেখে সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন তাঁর দলের প্রতিনিধিরা। আমি অনেকবার এই রাজ্যে এসেছি। দিদি আপ্যায়ণের কোনও ত্রুটি রাখেননি। তাই এবার ওনাকে আমরাওয়া আপ্যায়ণ করতে চাই। সেই কারণে ওনাকে আমরা কাশ্মীর আসার জন্য আমন্ত্রণ করেছি।”
আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি অবশ্যই কাশ্মীর যাব। পুজোর পর কাশ্মীর যাওয়া পরিকল্পনা করছি। বাংলার সঙ্গে কাশ্মীরের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলার বহু মানুষ কাশ্মীর ঘুরতে যান। আমি চাইব আরও মানুষ কাশ্মীর ঘুরতে যাক। উনি সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। তবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা দিচ্ছে কেন্দ্র। ফলে সেখানে ওনার কোনও হাত নেই। তবে উনি পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহভরা আশ্বাস, “কাশ্মীর আমাদের দেশের গর্ব। পহেলগামে যা ঘটেছে, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তার জন্য কাশ্মীরকে একঘরে করে রাখা যায় না। কেন্দ্রকে দেখতে হবে, কাশ্মীর যেন আরও নিরাপদ হয়। আমি কাশ্মীরকে ভালোবাসি। দুর্গাপুজোতে আমি ওমরজিকে আমন্ত্রণ জানালাম— বাংলা যেন ওঁকে অতিথি হিসেবে পায়।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “টলিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের বলব কাশ্মীরে গিয়ে শুটিং করুন। ওখানকার অপার সৌন্দর্য যেন পর্দায় ফিরে আসে। কাশ্মীরের সংস্কৃতি বাংলায় তুলে ধরার জন্য পর্যটন দফতরকে নির্দেশ দেব।”
কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও আত্মবিশ্বাসের সুর, “পহেলগামের ঘটনার পরে কিছুদিন হোটেলগুলো ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বিমান চলাচল কমে গিয়েছিল। কিন্তু এবার আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কাশ্মীর। দিনে ৫০টা বিমান যেত, তা নেমে গিয়েছিল ১৫-তে, এখন আবার বেড়ে হয়েছে ২০-২৫। কলকাতা থেকেও সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে।” তিনি জানান, “কাশ্মীর এখন আর ‘ফাঁকা’ নয়। পর্যটকরা আসছেন, অমরনাথ যাত্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাচ্ছেন। কেউ তো বলেননি তাঁরা নিরাপদ বোধ করেননি। নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ তৎপরতায় কাজ করছে। আমি ফাঁকা কাশ্মীরকে প্রোমোট করতে আসিনি, এসেছি কাশ্মীরের সম্ভাবনাকে ফের জাগিয়ে তুলতে।”

এদিকে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর, কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, “বাংলার বহু পর্যটক কাশ্মীরে বেড়াতে যান। উনি বলছেন, নিরাপত্তা দেবেন, নির্ভয়ে বেড়াতে যেতে। আমরাও চাই মানুষ কাশ্মীরের মতো সুন্দর পর্যটন স্থানে বেড়াতে যাক। তবে বর্ডার এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তো কেন্দ্রের। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা উচিত যাতে বৈষ্ণোদেবী, পহেলগাঁও, ডাল লেকের মতো সুন্দর জায়গায় মানুষ বেড়াতে যেতে পারেন নির্ভয়ে। আমাকে কাশ্মীর যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি গ্রহণ করেছি। পুজোর পর আমি কাশ্মীর যাব।”