সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
পোশাকি নাম ‘ইন্ডিয়ান রোলার’, আর আদুরে নাম নীলকন্ঠ। বিশেষ এই পাখির সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার আবেগ দুর্গা পুজো। কলকাতার বনেদি বাড়িগুলিতে এই পুজোকে ঘিরেও রয়েছে নানান রীতিনীতি। তার মধ্যে একটি রীতি হল দশমীর দিন নীলকন্ঠ পাখি ওড়াবার চল। শোভাবাজারের রাজবাড়ি থেকে শুরু করে আরও অনেক বনেদি বাড়িতে এই প্রথার চল ছিল।
কিন্তু কেন এই প্রথা? তা জানতে হলে চোখ ফেরাতে হয় পুরাণের পাতায়। শিবের আরেক নাম নীলকন্ঠ। সমুদ্রমন্থনের সময় যে বিষ উঠে এসেছিল তা গ্রহণ করতে রাজি ছিল না অসুর-দেবতা কেউই। তখন সৃষ্টিকে রক্ষা করতে নিজের গলায় সেই বিষ ধারণ করেন স্বয়ং মহাদেব। সেই বিষের জ্বালায় নীল হয়ে ওঠে মহাদেবের গলা। সেই থেকেই তাঁর নাম নীলকন্ঠ।
নীলকন্ঠ পাখিকে শিবের দূত হিসাবে ভাবা হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই পাখির দেখা পাওয়া শুভ। মনে করা হয় দশমীর দিন মায়ের ঘরে ফেরার বার্তা আগাম গিয়ে দেবাদীদেব মহাদেবকে জানায় এই পাখি। মনে করা হয় শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের আগে দেখা পেয়েছিলেন এই পাখির। এই পাখির রং নীল হওয়ায় শিবের দূত মনে করা হয়।
এশিয়ার বিস্তৃত অংশ, ভারতীয় উপমহাদেশ, এবং মধ্যপ্রাচ্যে মূলত এই পাখির বাস। নীলকন্ঠ পাখি লম্বায় ২৬-২৭ সেন্টিমিটার, এই পাখির দেহ, লেজ ও ডানায় এক উজ্জ্বল নীল রঙের জৌলুস দেখা যায়। তবে ভারতে এই পাখির যে বিশেষ প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় তাদের গলার কাছের অংশটি হালকা বাদামি রঙের হয়।
তবে একসময় বিসর্জনের সময় নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা থাকলেও আজ তা বন্ধ। আসলে এই প্রথার কারণে নির্বিচারে মারা পড়ত নীলকন্ঠ পাখি। পুজোর আগে পাখি ধরতে গিয়ে অনেক সময় আহত হত। সেই আহত পাখিই খাঁচায় বন্দি করে রাখা হত। দশমীর দিন আহত পাখিদের জোর করে উড়িয় দেওয়া হত। ফলে কিছু দূর যাওয়ার পরি অনান্য শিকারি পাখিদের কবলে পড়ে প্রাণ হারাতো নীলকন্ঠেরা। তাই সরকার থেকেই আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয় নীলকন্ঠ পাখি ধরার চল। ফলে এখন মাটির পাখি তৈরি করেই দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে হয়।