শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“সারা দেশে যখন বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে মরিয়া মোদী সরকার, বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তখন এই অনুপ্রবেশকারীদের ‘রক্ষাকবচ’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়”! মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এভাবেই গর্জে উঠলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে শুভেন্দু লিখেছেন, “বাংলার জনগণ জানেন যে মাননীয়া আপনি ভোটের রাজনীতি ছাড়া কিছুই গুরুত্ব দেন না, তাই আপনার বাঙালি অস্মিতা’র রাজনীতি যে স্রেফ আপনার পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা, তা সবাই ভালো করে জানে”। ” কেন দুই সিনিয়র আইএএস অত্রি ভট্টাচার্য এবং সুব্রত গুপ্ত উপেক্ষিত থেকে গেলেন,এবং মনোজ পন্ত কে কেন জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও কেন মুখ্য সচিব করা হল? সেই প্রশ্নও তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি তার পোস্টে মমতাকে চূড়ান্ত নিশানা করে বলেছেন, “আপনার সরকার ও প্রশাসন যখন যোগ্য এবং দক্ষ বাঙালি অফিসারদের থাকা সত্বেও, তাদের উপেক্ষা করে, ‘বাইরের’ লোকদের খোঁজে, যারা শুধুমাত্র আপনাদের কথায় উঠবে বসবে, তখন কোথায় যায় বাঙালি অস্মিতা”?
এসএসসি চাকরি দুর্নীতি কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু লেখেন, হাজার হাজার খাঁটি বাঙালি আজ আপনার দুর্নীতির জন্যে শিক্ষকতার চাকরি হারিয়ে রাজপথে বাংলা ভাষায় আর্তনাদ করছে, তাদের কথা আপনার কানে পৌঁছচ্ছে না কেন? অথচ ভিন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের আর্তি আপনি ঠিক শুনতে পাচ্ছেন” ! পাশাপাশি সীমান্ত ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা না করার জন্য মমতাকে নিশানা করে শুভেন্দু লেখেন, “আপনার অসহযোগিতার কারণে ও জমি না দেওয়ায়, ভারত সরকার সীমান্তে ৫৪০ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া না দিতে পারায়, এরা বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভারতবর্ষে ঘাঁটি গেড়েছে”?
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাকি রয়েছে বেশ কয়েক মাস। তবে তার আগেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ফের সরগরম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলের পাল্টা হিসেবে আজ কলকাতায় বিরাট মিছিল করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মিছিল শেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি জমা দেন তিনি। সেখানেই বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন শুভেন্দু।

এদিন ধর্মতলায় শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির এই পাল্টা মিছিল ব্যাপক সাড়া ফেলে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন দলের বহু নেতা-কর্মী ও সমর্থক। তৃণমূলের মিছিলে যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং এনআরসি-সিএএ ইস্যুকে সামনে রেখে কেন্দ্রকে নিশানা করা হচ্ছিল, তখন শুভেন্দুর মিছিলে মূলত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং বিশেষ করে অনুপ্রবেশ ও রোহিঙ্গা ইস্যুকেই বড় করে তুলে ধরা হয়।
মিছিল শেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কার্যত বোমা ফিন্দেন। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, “ভোটার লিস্ট থেকে অবিলম্বে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাদ দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোহিঙ্গাদের স্বার্থে পথে নেমেছেন।” এই মন্তব্য করে শুভেন্দু রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে এক গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরলেন।
তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশকারী। তারা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এদের ভোটার তালিকায় থাকা মানে দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্ন করা। নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যেন ভোটার হতে না পারে।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর জল্পনা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা এবং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে সামনে আনলেন, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে ফাটল ধরাতে চাইছেন, তেমনি হিন্দুত্ববাদী ভোট একত্রিত করারও চেষ্টা করছেন। তবে এই “রোহিঙ্গা কার্ড” শেষ পর্যন্ত কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।