বিশ্বের অন্যতম নিরাপত্তা-সচেতন আর্ট গ্যালারি (Louvre Museum)। যেখানে এক নজর দেখতে লাখো মানুষ ভিড় করেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি (Mona Lisa)-র সামনে। আর সেই মিউজিয়ামের মাত্র কয়েকশো মিটার দূরেই ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড — দিনেদুপুরে চুরি হয়ে গেল সম্রাট নেপোলিয়নের আমলের একাধিক অমূল্য রত্ন!
রবিবার সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ ঘটে এই (Louvre Museum Theft)। দর্শকে ঠাসা মিউজিয়ামে, চোখের পলকে নিখোঁজ হয় ৮টি রাজকীয় অলংকার। তদন্তে উঠে এসেছে— পুরো ডাকাতি শেষ করতে সময় লেগেছিল মাত্র ৪ মিনিট!
৪ মিনিটের দুঃসাহসিক চুরি!
মিউজিয়ামের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিড়ের মধ্যেই চোরেরা প্রবেশ করে ফ্রান্সের রাজপরিবারের অলঙ্কার-সংগ্রহের ঘরে। সেখানে প্রদর্শিত হচ্ছিল রানী ইউজিন (Queen Eugénie)-এর বিখ্যাত পান্নার মুকুট, নেপোলিয়ন-তৃতীয়ের সময়কার গয়না, নীলা, নেকলেস, কানের দুল ও একটি ঐতিহাসিক ব্রোচ।
চোরেরা দক্ষতার সঙ্গে ডিসপ্লে কেসের কাচ ভেঙে, মাত্র কয়েক মিনিটে তুলে নেয় ৮টি অমূল্য জিনিসপত্র। পুলিশ সূত্রে খবর, চুরির পর তারা মোটরবাইকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা শুধু একটি ট্রাক দেখতে পান, যার মই মিউজিয়ামের ব্যালকনির জানালায় লাগানো ছিল। সেই পথেই ঢুকে পড়েছিল চোরেরা।
—
🕵️ ফরাসি পুলিশের তৎপরতা
ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (French Interior Minister Laurent Nunez) জানিয়েছেন, অন্তত ৩ থেকে ৪ জন পেশাদার চোর এই অপারেশনে জড়িত। চুরি হওয়া গয়নার মধ্যে রানী ইউজিনের মুকুট উদ্ধার হয়েছে ভাঙা অবস্থায়, তবে বাকিগুলির কোনও হদিশ নেই।
“এটি এক বিরল দুঃসাহসিক ঘটনা। মিউজিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি কীভাবে ব্যবহার করা হলো, তা তদন্তে স্পষ্ট হবে,” জানিয়েছেন নুনেজ।
রোববার তদন্তের স্বার্থে ল্যুভর একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
মাত্র ২৫০ মিটার দূরেই ‘মোনালিসা’!
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, চুরি হওয়া গ্যালারিটি (Mona Lisa painting) থেকে মাত্র ২৫০ মিটার দূরে। যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রটি রাখা আছে বুলেটপ্রুফ কাচ ও তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত বাক্সে।
কিন্তু এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, ল্যুভরের প্রতিটি অংশে সমান নিরাপত্তা নেই। ৩৩,০০০-এরও বেশি মূল্যবান বস্তু রাখা এই মিউজিয়ামে সব জায়গায় একই স্তরের নজরদারি সম্ভব হয়নি।
একজন দর্শক, Magali Cunel, বিস্মিত কণ্ঠে বলেন —
> “তারা দিনের বেলায় লিফটে উঠে জানালা ভেঙে রত্ন নিয়ে পালালো — এটা অবিশ্বাস্য! এত বিখ্যাত মিউজিয়ামে কীভাবে এমন স্পষ্ট নিরাপত্তা ত্রুটি থাকতে পারে?”
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!
এটি ল্যুভরের ইতিহাসে প্রথম চুরি নয়। (Mona Lisa theft 1911) ঘটনার কথা আজও বিশ্ব মনে রেখেছে।
১৯১১ সালে ইতালীয় কর্মী Vincenzo Peruggia মোনালিসাকে ফ্রেম থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। দু’বছর পর ১৯১৩ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সের একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয় সেই চিত্রকর্ম।
তারপর থেকেই মোনালিসার চারপাশে অতি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় — কিন্তু মিউজিয়ামের অন্য অংশে যে ফাঁকফোকর থেকে গেছে, তা এই নতুন চুরি প্রমাণ করে দিল।

ইউরোপের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম আর্ট চুরি!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই (Louvre Museum Jewel Heist) ইউরোপের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম আর্ট চুরি।
এর আগে ২০১৯ সালে জার্মানির (Dresden’s Green Vault Museum) থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের রত্ন চুরি হয়েছিল। এবার ল্যুভরের এই ঘটনা আবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ল্যুভরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিউজিয়ামের সিসিটিভি ফুটেজ ও বায়োমেট্রিক লগ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে— এত প্রযুক্তি-নির্ভর সুরক্ষার মাঝেও কীভাবে চোরেরা এত দ্রুত ও নির্ভুলভাবে কাজটি করতে পারল?
ইউরোপের আর্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুরির পেছনে একটি সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক চোরচক্র কাজ করেছে, যারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট টার্গেটে হাত মেরেছে।
‘মোনালিসা’-র দেশ প্যারিসে (Louvre Museum Theft) আবারও মনে করিয়ে দিল— শিল্প ও ঐতিহ্যের সুরক্ষার বিষয়টি এখনও কতটা নড়বড়ে।
মাত্র চার মিনিটের অপারেশনে চুরি হওয়া এই ৮টি অমূল্য বস্তু শুধু ফরাসি ইতিহাসের অংশ নয়, বিশ্ব সংস্কৃতির সম্পদ। এখন সবার চোখ ফরাসি পুলিশের দিকে— তারা কি পারবে এই অমূল্য রত্নগুলিকে আবার ফিরিয়ে আনতে?