সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীদের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় কাঠগড়ায় বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন উত্তরপ্রদেশ সরকার। সাধুসন্ত এবং স্বজন হারানো তীর্থযাত্রীদের পাশাপাশি কুম্ভ মেলার আয়োজনে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের যথেষ্ট পরিকল্পনার অভাব ছিল বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকুম্ভে পুর্ণ্যার্থীদের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় শোকপ্রকাশ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার উদাহরণ দিয়ে পরোক্ষে কুম্ভ মেলার প্রস্তুতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীদের পদপিষ্ট হওয়ার কথা জানার পরে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে বিপর্যয়ের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। মৃতদের শোকস্তব্ধ পরিবারের জন্য আমি প্রার্থনা করছি।”
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “গঙ্গাসাগর মেলা থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়েছি যে যেখানে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থীদের জমায়েত হয় সেখানে জীবন বাঁচাতে যথাযথ পরিকল্পনা এবং যত্নের প্রয়োজন হয়।”
প্রসঙ্গত, মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে পুণ্যস্নানের আগে প্রয়াগরাজের সঙ্গমঘাটে ঘটল পদপিষ্টের ঘটনা। এরপরেই এক লহমায় বদলে গেল উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সংগম লাগোয়া এলাকার দৃশ্য। কেউ মাটিতে বসে কাঁদছে আবার কেউ এতটাই ভেঙে পড়েছে তাদেরকে সামলান যাচ্ছে না। কাউকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক কথায় বলা যায়, মহাকুম্ভের পরিস্থিতি কার্যত ভয়াবহ। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ।
মহাকুম্ভ-এ পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি অখিলেশ যাদব। যোগী সরকারের কাছে পাঁচটি আবেদন করেছেন অখিলেশ। কনৌজের সাংসদ লিখেছেন, “মহাকুম্ভ-এ অপ্রীতিকর ঘটনায় ভক্তদের মৃত্যুর খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। শ্রদ্ধাঞ্জলি!” অখিলেশ বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, গুরুতর আহতদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্যে নিকটতম সেরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত এবং অবিলম্বে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা উচিত। নিহতদের দেহ শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাদের পুনরায় একত্রিত করার জন্য অবিলম্বে প্রচেষ্টা করা উচিত। হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নজরদারি বাড়ানো উচিত। সত্যযুগ থেকে শাহী স্নান-এর অখণ্ড-অমৃত ঐতিহ্য বজায় রেখে, ত্রাণ কাজের সমান্তরালে নিরাপদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে’ মৌনী অমাবস্যার শাহী স্নান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা উচিত।
মহাকুম্ভের ঘটনা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিও। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তিনি অভিযোগ করেছেন, “ভিআইপি-দের পুণ্যস্নানের আয়োজন করতে গিয়েই সাধারণ পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়নি উত্তর প্রদেশ সরকার।” প্রসঙ্গত গত সোমবারই সপরিবারে কুম্ভে পুণ্যস্নান সারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। স্নান সারতে দেখা গিয়েছে বিজেপি-র অন্যান্য নেতা মন্ত্রীদেরও। সেই প্রসঙ্গ তুলেই রাহুল গান্ধি খোঁচা দিলেন। এক্স হ্যান্ডেলে রাহুল লিখেছেন, “মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতা, আয়োজনে ঘাটতি এবং সাধারণ পুণ্যার্থীদের দিকে নজর না দিয়ে ভিআইপি-দের খেয়াল রাখার প্রবণতাই দায়ী। এখনও মহাকুম্ভে একাধিক মহাস্নান বাকি রয়েছে, সেই স্নানগুলির সময় যাতে এমন দুঃখজনক ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”