সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘২০২৪ সালে আপনারা যে জিতেছিলেন, কোন ভোট নিয়ে জিতেছিলেন? কোন ভোটার লিস্ট ছিল? যদি এই লিস্ট মিথ্যা হয়, তাহলে আপনার সরকারও মিথ্যা। আপনাদের চেয়ারও মিথ্যা। করতে লুঠ, বলতে ঝুট!’ বাংলার ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর দিন কলকাতার রাজপথে মহা মিছিল থেকে এভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন মমতা।
আধার কার্ড কে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে মানা হচ্ছে না বলে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, ‘৭০০ ভোট ২০০২ ম্যাপে রয়েছে, তাহলে নয়া ম্যাপ ২০২৫ সালে বানিয়েছেন, তাহলে ৫২৬ জন বাদ গেল কীভাবে? এরকম একটা বুথ নেই। আরো অনেক বুথ রয়েছে এমন। আধার কার্ড করতে লেগেছিল, প্রত্যেককে ১০০০ টাকা করে নিয়েছিল। চুরি করেছিল! যদি আধার কার্ড বানাতে প্রত্যেক ভোটারের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে নিল, তাহলে এখন কেন বলছে আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়? এদিকে, ব্যাঙ্কেও লিঙ্কের জন্য আধার নম্বর লাগে! মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। দিল্লি থেকে এই সরকারকে সরাও। কোনও আধারের প্রয়োজন পড়বে না। এখন আবার কাস্ট সার্টিফিকেট দিচ্ছে। কত কার্ড বানাবে?’
নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করে বলেন, ‘বিজেপিতে কয়েকটা গদ্দার রয়েছে। যাকে যা ইচ্ছা বলে এজেন্সিকে দিয়ে। ৮০টা গাড়ি নিয়ে ঘোরে, আবার নাকি জনগণের নেতা। সর্বত্র বডি গার্ড নিয়ে ঘোরে। একজন আইনজীবী খবর দিলেন, গতকাল কোনও এক বাবু বলছেন, তিনি একটা জেলায় যাবেন, কোনও জনগণ না থাকেন, ভিড় না থাকেন! কোন হরিদাস পাল? আজ পুলিশ দেখতে যাবে, কোথায় লোক থাকবে আর থাকবে না! সাহস থাকে তো মানুষের কাছে যাও না। টাকা আছে বলে ভিডিয়ো করে সামাজিক মাধ্যমে, গদি মিডিয়ায় থাকতে পার, মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়। কটা সিটে জিতেছিল। মহারাষ্ট্রে কটা সিটে জিতেছিল মনে আছে? তাই বাবুকে বলছি, আমি চেয়ারটাকে সম্মান করি, তাই কোন বাবু বলছি না, প্রথম বাবুও হতে পারে, দ্বিতীয় বাবুও হতে পারে, আবার বাচ্চারা চামচ দিয়ে দুধ খায়, সেই বাবুও হতে পারে, আমি কাউকে ইঙ্গিত করছি না। মনে রাখবেন, দালালি করারও একটা লিমিট রয়েছে।’

২ কোটি নাম দিয়ে বাংলা দখলের প্ল্যান করছে
মমতা বলেন, ‘এক তো দেশে মীরজাফর আছে, যাঁর হাতে রক্তের দাগ রয়েছে, আপনি কি ভাবছেন, ওরা সব স্বর্গে যাবে? নিজেদের দলেই তো কত বিভেদ? আসলে বাংলার ওপর ওদের খুব রাগ। বাংলার সঙ্গে ওরা পেরে ওঠে না। গদিওয়ালারা ভাবছে, যেন তেন ভাবে ২ কোটি লোকের নাম বাদ দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিই, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিই, কিংবা দেশ থেকে তাড়িয়ে ওদের ক্ষমতা দখল করে নিই। আমি এটাও শুনেছি, ওরা বলছে, যদি জোর করে ২ কোটি লোকের নাম বাদ দিয়েও জিততে না পারি, তাহলে এখন বলছে অন্য কথা। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস নাকি পেয়েছে, ৪০ শতাংশ, ওরা নাকি পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ। যত দূর মনে পড়ছে, ২০০৪ সালে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে একা জিতেছিলাম বাংলায়, কেউ জেতেনি। শেষ এসআইআর বাংলায় হয় ২০০১ সালের নির্বাচনের পর। ২০০২-০৩ নির্বাচন ছিল না। ২০০৪ সালে লোকসভা ভোট হয়, সেই ভোটার লিস্টে ভোট হয়, ২ থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। আজ মোদী ও শাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে কুর্সিবাবু, যিনি ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন, তাঁর ইতিহাস পাতিহাস হবে। বিহার প্রথমে বুঝতে পারেনি, যখন বুঝেছি, নাম কেটে বাদ গিয়েছে। কিন্তু আমরা প্রথম থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করছি, যদি একটাও নাম বাদ যায়, বিজেপি সরকার ভেঙে ছাড়াব। আমাদের কাছেও তথ্য কম নেই। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত! কথায় কথায় মীরজাফর এজেন্সি পাঠায়। আমাদের তিন বিধায়ককে ফোন করে মিথ্যা কেস দিচ্ছে। আমরা তো ধরে কেস দেব।’

২০০২ সালের তালিকায় অভিষেকের নাম নেই বলে উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘অভিষেককে বলছে, তোর পিসির থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আয়, মানে আমাকে বলছে। ওরা আর পিসি-মাসিকে কী সম্মান দেবে। বাবাকে মন্ত্রী করা হয়েছিল, বাবার মন্ত্রিত্বগ্রহণের সময়ে ছেলে যায়নি সেখানে, বাবাকে কেন করা হয়েছে তাই, তাঁদের থেকে আর কী আশা করবেন? আমাদের সময়ে হোম ডেলিভারি হত, কিন্তু আমরা যখন স্কুলে ভর্তি হয়েছি, আমাদের একটা ডেথ অথ বার্থ দেওয়া হয়েছিল। আমি ৭ বার সাংসদ, ৪ বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ৩ বারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও আমার ডেথ অফ বার্থ নিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে? আমাদের ভদ্রতা আমাদের দুর্বলতা নয়। আমরা কেন আপত্তি করছি? কেন এতদিন পপুলেশন সেনসাস করলে না। ওড়িশার একজনকে করে দিয়েছে, বাংলার পপুলেশন সেনসাসের হোতা! আমাদের কাছে হিসাব আছে, লক্ষ্মীর ভান্ডার কত পায়!’