সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
২০১৬ সালের এসএসসি দুর্নীতির বিতর্ক এখনো মেটেনি। তার মধ্যেই 2025 সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বেরোনোর পর থেকে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। লিখিত পরীক্ষায় ৬০–এ ৬০ পেয়েছেন, এমন চাকরি প্রার্থীদেরও স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ইন্টারভিউয়ে না ডাকার অভিযোগ উঠেছিল। এসএসসি-র ইন্টারভিউ নিয়ে এমন একাধিক গুরুতর ত্রুটির অভিযোগ তুলে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হলো মামলা।
এসএসসি-র ইন্টারভিউ তালিকায় অযোগ্য প্রার্থীদের নাম থাকার অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছিল, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা প্রার্থী হিসেবে এমন নামও রয়েছে, যাঁদের জন্ম ১৯৯৭ সালে। এত অল্প বয়সে কী ভাবে তাঁরা অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে ইন্টারভিউয়ের তালিকাতে জায়গা করে নিলেন, উঠছিল সেই প্রশ্ন। পাশাপাশি, চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের দাবি, ভুল সংশোধন করে মেধা অনুযায়ী নাম তুলে ফের প্রকাশ করতে হবে ইন্টারভিউয়ের তালিকা। এ বার এই ঘটনার জল গড়াল হাইকোর্টে।
সোমবার হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে শিক্ষকদের তরফে। মামলাকারীদের দাবি, ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের তালিকায় একাধিক ‘দাগি অযোগ্য’-এর নাম রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কী ভাবে তাঁদের এই সুযোগ দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাকিরা। এমনকি, অভিযোগ, প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেছেন এমন অনেকেই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার নিরিখে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পেয়ে গিয়েছেন। আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের দাবি, আংশিক সময়ের জন্য কাজ করতেন এমন কর্মীরাও তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে একই সুবিধা নিয়েছেন। এ সব অনিয়মের বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে গিয়েছেন শিক্ষকেরা। আগামী বুধবার বিচারপতি অমৃতা সিংহর বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা।
মামলাকারীর আইনজীবী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে বলেন, ‘ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সুযোগ পেয়েছেন অযোগ্যরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু ইন্টারভিউয়ে যাঁদের ডাকা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে টেন্ডেড প্রার্থীদেরও নাম রয়েছে। সেকেন্ডারি শিক্ষকরা পূর্ব শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বরাদ্দ ১০ নম্বরের সুবিধা পেয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষকরাও সুবিধা পেয়েছেন। যাঁদের ১৯৯৭ সালের জন্ম, তাঁরাও এই সুবিধা পেয়েছেন।’
এসএসসি-র বক্তব্য, স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, এই বছর ৩ এপ্রিল সম্মানীয় সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে বিশেষভাবে সক্ষম প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচ্য যে কোন প্রার্থী যদি এত সতর্কতা সত্ত্বেও দাগী হয়ে সুযোগ পেয়ে যান, তাহলে ভেরিফিকেশন করার সময় অবশ্যই তাকে বাদ দেওয়া হবে। সেই ক্ষমতা সব সময় স্কুল সার্ভিস কমিশনের হাতে আছে।
অন্যদিকে, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের শূন্যপদ আরও বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
প্রকাশিত তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে এদিনই বিকাশভবন অভিযানে নেমেছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন চাকরিপ্রার্থীরা। এদিন সেই অবস্থান থেকে সরকারকে ৩ ঘণ্টার ডেডলাইনও বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। অভিজ্ঞতার জন্য দেওয়া ১০ নম্বর বাদ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, নতুন এবং পুরনো সকলের ক্ষেত্রেই আমাদের একটাই অনুরোধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রসেস চলছে। পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ হতে দিন। ব্রাত্য বসু বলেন, ‘আমরা চায় না একজনও যোগ্য বঞ্চিত হোক। তাই শূন্যপদ বাড়ানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তবে আইনি পরামর্শ ছাড়া এ ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত কিছু বলব না।’