শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
সুন্দরবনের জঙ্গল আবারও খেল দেখাল ভয়াল রূপ। (Sundarbans tiger attack)–এ সোমবার সকালে প্রাণ হারালেন কুলতলির কাঁটামারি বটতলার বাসিন্দা মৎস্যজীবী শম্ভু সরদার (৩০)। নদীর নৌকা থেকে রীতিমতো টেনে নিয়ে গিয়ে হামলা চালায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আচমকা ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া ও তীব্র আতঙ্ক।
✔ জীবিকার টানেই সুন্দরবনের পথে
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরেই সুন্দরবনের নদীপথে মাছ ও কাঁকড়া ধরে সংসার চালাতেন শম্ভু। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে বৃদ্ধ বাবা–মা ও দুই ছোট সন্তানের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনিই। অভাবের সংসার টানতে প্রতিনিয়ত (Sundarbans fishers risk)–এর মতো জীবনপণ ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামতেন।
✔ শুক্রবার গিয়েছিলেন তিনজন, সোমবার ফিরে এল শুধু আতঙ্কের খবর
গত শুক্রবার, অমৃত প্রামাণিকের নৌকায় শম্ভুসহ তিন মৎস্যজীবী সুন্দরবনের চামটা জঙ্গল সংলগ্ন নদীপথে পাড়ি দেন। নিয়মমাফিক সকলে জাল ঠিক করছিলেন, এমন সময় সোমবার সকালে আচমকা ঘন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে একটি প্রাপ্তবয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
হুড়মুড় করে শম্ভুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। ঘটনার আকস্মিকতায় বাকিরা চিৎকার ও ছুটোছুটি শুরু করলেও কশ্মিনকালেও আটকাতে পারেননি। বাঘটি পিছনদিক দিয়ে শম্ভুকে চেপে ধরে টেনে জঙ্গলের অন্ধকারে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা দুই সঙ্গীর আতঙ্কগ্রস্ত চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়।
✔ এখনও উদ্ধার হয়নি দেহ, গ্রামের মানুষ আতঙ্কে
স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে বনদফতরকে খবর দিলে শুরু হয় তল্লাশি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শম্ভুর দেহ উদ্ধার হয়নি বলে বনদফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে। গোটা এলাকায় এখন তীব্র আতঙ্ক। সুন্দরবনের গ্রামগুলিতে পুরনো ভয় যেন নতুন করে ফিরে এসেছে—“বাঘ আবার বেরিয়েছে!”
✔ প্রতি বছর ফিরছে একই মর্মান্তিক গল্প
প্রতিবছরই সুন্দরবনে মাছ–কাঁকড়া ধরতে গিয়ে একইভাবে ঘটে (Sundarbans tiger human conflict)–এর নজিরবিহীন ঘটনা। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি আর নতুন নয়, কিন্তু প্রতিটি মৃত্যু যেন নতুন করে প্রশ্ন তোলে—
কবে নিরাপদ হবেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা?
জীবিকা চালাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। শম্ভুর মৃত্যুর পর ফের আলোচনায় এসেছে এলাকার নিরাপত্তা। বনদফতরের টহলদারি, নৌকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা–কিট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নতুন করে।
“সকালেও কথা হয়েছিল, ভাবিনি আর ফিরবে না”— ভেঙে পড়েছে পরিবার
শম্ভুর বৃদ্ধ বাবা–মা ও দুই ছোট সন্তান এখন পুরোপুরি অসহায়। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন—
“ওই ছেলে না থাকলে ওদের ঘর চলবে না। সকালে নৌকায় যাওয়ার সময় কথা হয়েছিল। ভাবিনি এভাবে শেষ হয়ে যাবে।”
এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো—সুন্দরবনের প্রতিটি দিনই বেঁচে ফেরার লড়াই। জীবিকার টানে নদীতে নামা এই মানুষগুলির সুরক্ষায় সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে দাবি উঠছে সর্বত্র।