সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
‘কেন্দ্রীয় সরকার ভোটার ঠিক করে দিচ্ছে। যাদের নাম বাদ গেছে অর্থাৎ যে ৫৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গেল সেটা পাবলিক ডোমেনে দিচ্ছে না কেনো?’ কলকাতায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সিইও দপ্তরে গিয়ে অভিযোগ জানানোর পরে এভাবেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
আজ শনিবার থেকেই বাক শুরু হয়েছে বাংলার ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর প্রক্রিয়ার শুনানি পর্ব। হিয়ারিং শুরুর দিনেই সিইও দফতরের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এতদিন রাজ্যপুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছিল। শনিবার থেকে কলকাতায় সিইও-র দফতরকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আনা হয়েছে।
শুনানি পর্বের প্রথম দিনই নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে একাধিক গরমিলের অভিযোগ জানায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, মলয় ঘটক, অরূপ বিশ্বাস এবং মানস ভূঁইয়া। মূলত এসআইআর প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত বিষয়গুলির উপর প্রশ্ন তুলে অভিযোগ জানাতে উপস্থিত হন কমিশন দফতরে। এর আগেও দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে মূখ্য নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এদিন করা হয়, ইআরও -রা কেন্দ্রের পক্ষে কাজ করছে, তাই নাম বাদ দিয়ে দিচ্ছে। যে একটি দলেরঅভিযোগ পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এক কোটি নাম বাদ দিতে হবে সেই কথাই মেনে কাজ করছে কমিশন। অন্যদিকে ইআরও-দের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ডিইও-কে দিয়ে ভেরিফাই করানো হচ্ছে। কমিশন এই কাজ ইআরও-দের টপকে করছে। এটা কিভাবে হচ্ছে সে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। সিইও মনোজ কুমারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ভোটার ঠিক করে দিচ্ছে । যাদের নাম বাদ গেছে অর্থাৎ যে ৫৫ লক্ষ-এর নাম বাদ গেল সেটা পাবলিক ডোমেনে দিচ্ছে না কেন? বিএলও অ্যাপ কাজ করছে না। সেখানে ভোটারদের তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না।’
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল এদিন সরব হন বয়স্ক মানুষদের শুনানিতে ডাকা নিয়ে। তাঁরা অভিযোগ করেন বয়স্ক মানুষদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ভীতি তৈরি হচ্ছে তাঁদের মনে। বাংলা বলেই এই ভীতি তৈরি করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির পুতুল ও বিজেপির বি টিমেরও তকমা দেওয়া হয় তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে।
তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের অভিযোগ, যারা দূরে থাকেন তাদের নাম ইচ্ছা করে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ এত অল্পদিনে যারা দূরে থাকেন তাঁরা আসতে পারবেন না। একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এসআইআর এর সার্ভের কাজ করানো হচ্ছে, যে সংস্থাটি একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করে। ফর্ম ৬, ৭, ৮ এগুলি কার কাছে জমা দেবে সাধারণ মানুষ? কারণ বিএলও সব সময় বসছেন না, ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
চন্দ্রিমার প্রশ্ন, ‘এই নামগুলি বাদ দেওয়া হল কেন? এটা কি সেই উদ্দেশেই করা হচ্ছে, যার ইঙ্গিত কিছু রাজনৈতিক দল আগেই দিয়েছিল – যে দু কোটি নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে?’ তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রক্রিয়া তাঁরা কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না। তাঁর আরও অভিযোগ করেন, এর মাধ্যমে কার্যত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘ফার্স্ট অ্যাপিলেট অথরিটি হল ডিইও। কিন্তু যদি ইআরও স্তরেই নাম ‘ডিসপোজ’ করে দেওয়া হয়, তাহলে ডিইও-র ভূমিকা কোথায়?’