কনিষ্ক সামন্ত। কলকাতা সারাদিন।
“পুলিশের কাজ হল তৃণমূলকে সন্তুষ্ট করা। পয়সা তোলো আর যত রকম নোংরা কাজ আছে কর। যার তার কাছে বন্দুক… সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই।” এভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করে বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আজ বৃহস্পতিবার সাতসকালে মালদার ঝলঝলিয়ার মাতাল মোড়ে দাঁড়়িয়ে থাকার সময় গুলিবিদ্ধ হন তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার। তিন জন যুবক মাথায় হেলমেট পরে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি চালায়। প্রথম দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তৃতীয় গুলিটি দুলালের মাথা ফুঁড়ে যায়। আজ দুপুরে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময় মালদার তৃণমূল নেতার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তৃণমূলের হিন্দু নেতাকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। কলকাতার বুকে কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ আক্রান্ত হয়েছেন। সন্দেশখালিতে সুকুমার মাহাতো আক্রান্ত হয়েছে। মিনাখাঁর এমএলএ-এর উপর আক্রমণ হয়েছে। আজকে দুলাল সরকারের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এটা হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির অপদার্থতার জন্য। ২০২১ সালে বিজেপির প্রার্থী গোপাল সাহার ওপরেও গুলি চলেছিল। তৃণমূলের হিন্দু নেতাকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এটা হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির অপদার্থতার জন্য।” বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিএসএফ বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। এর জবাবে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, জ্ঞান না দিয়ে ৬০০ কিমি জমি বিএসএফ দেওয়া হোক। শুভেন্দু বলেন, “রাজ্যের জন্যই সীমান্তে ৬০০ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া দিতে পারেনি বিএসএফ। তৈরি করা যায়নি জওয়ানদের ১৭টি চৌকি। ফলে সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য কারা দায়ী, তা সকলে জানেন।”
সীমান্ত এলাকায় নারীদের ওপরে জওয়ানরা অত্যাচার করছে বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলনেতার পাল্টা প্রশ্ন, “যদি সত্যি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে এফআইআর করছেন না কেন? আসলে এগুলো সবই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।”
নন্দীগ্রামের সনাতনী মিছিল থেকে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যের বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “শেখ আব্দুল্লাহর সময়কালে ভারত কেশরীকে যেভাবে স্লো পয়জন করে মারা হয়েছিল সেভাবেই বাংলাদেশে গ্রেফতার সন্ন্যাসী চিন্ময় দাসকে মারা হতে পারে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন এবং নন্দীগ্রামে বিজেপির নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে সনাতনীদের প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি আরো বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু যিনি সব সনাতিনীদের এক করেছিলেন, তাকে আটকে রেখে বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি সনাতনী তাদের উপর দামন প্রেরণ এবং অত্যাচার চালানো হবে বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা। এমন ধর্মান্তরিত ও ভারতে চলে যাওয়ার বাধ্য করার মতন কাজও করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। তিনি বলছেন, এ লড়াই বাংলাদেশের হিন্দু এবং এপারের হিন্দুদের শুধু বাঁচার না অস্তিত্ব রক্ষারও লড়াই বটে।
বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের হেঁড়িয়ার সভা থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রসঙ্গ টেনে এনে শুভেন্দু বলেন, “যোগীর মতো মতো ২৬ সালে বাংলাতেও উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব।”
সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তি এবং রাজ্যে মৌলবাদের মাথা চাড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে এদিন হেঁড়িয়াতে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। ওই সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, “ফিরহাদ হাকিম বলছে, ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ করবে, বাংলা দখল করবে। তাই নিজেদের অস্তিত্ত্ব বাঁচাতে হিন্দুদের এক হতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে নাম না করে তৃণমূল কর্মীদের ‘মৌলবাদের বাচ্চা’, ‘পাকিস্তানের বাচ্চা’ বলেও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “২১ সালে আমি মাননীয়াকে নন্দীগ্রামে হারিযেছি, ২৬ এ রাজ্যে ওনাকে প্রাক্তন করবে হিন্দুরা।” এখন থেকে বাংলার ঘরে ঘরে গীতা পাঠের জন্য বাড়ি বাড়ি গীতা বিলি করার কথাও জানান বিরোধী দলনেতা।