সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায়ে বলেছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ১২ বছর ধরে কোনো সম্পত্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং কোনো আপত্তি ছাড়াই দখল করে রাখে, তাহলে তিনি সেই সম্পত্তির মালিক হতে পারেন। তবে, এই নিয়ম শুধুমাত্র বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে নয়।
ভারতে সম্পত্তি সংক্রান্ত নিয়ম ও আইন সম্পর্কে অনেক মানুষ সচেতন নন, যার ফলে অনেকসময় তারা বড় সমস্যায় পড়ে যান। বিশেষ করে, সম্পত্তি দখল নিয়ে মামলাগুলিতে প্রায়ই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এমনই একটি সম্পত্তি বিরোধের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই রায়ে সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করেছে, কবে একজন ব্যক্তি কোনো সম্পত্তির উপর মালিকানা দাবি করতে পারেন, তা সে বেসরকারি বা সরকারি সম্পত্তি যাই হোক না কেন। আসুন, এই রায় এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত আইনগত দিকগুলি বিস্তারিতভাবে জানি।
সুপ্রিম কোর্টের রায়
সুপ্রিম কোর্ট তার সাম্প্রতিক রায়ে বলেছে, যদি কোনো ব্যক্তি ১২ বছর ধরে কোনো সম্পত্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে দখলে রাখেন এবং সেই সময় সম্পত্তির মালিক কোনো আপত্তি না করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি সেই সম্পত্তির উপর মালিকানা দাবি করতে পারেন। এই রায়ের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, সম্পত্তির মালিকের নিষ্ক্রিয়তা দখলদারকে সুবিধা দিতে পারে, যদি নির্দিষ্ট শর্তগুলি পূরণ হয়।
এই রায়ের পিছনে যুক্তি হলো ব্রিটিশ আমলের আইন ‘বিরূপ দখল’ (Adverse Possession)। এই আইনের অধীনে, যদি কোনো ব্যক্তি ১২ বছর ধরে কোনো সম্পত্তি দখলে রাখেন এবং সেই সময় সম্পত্তির মালিক তাকে সরানোর জন্য কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেন, তাহলে সেই দখলদার সম্পত্তির মালিক হতে পারেন।
কবে ভাড়াটে সম্পত্তির উপর মালিকানা দাবি করতে পারেন?
অনেক সম্পত্তি মালিকের মনে প্রশ্ন থাকে, তাদের ভাড়াটে কি তাদের সম্পত্তির উপর মালিকানা দাবি করতে পারে? এর উত্তর হলো, হ্যাঁ, তবে এর জন্য কিছু বিশেষ পরিস্থিতির প্রয়োজন হয়। বিরূপ দখলের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ হতে হবে:
মালিকের নিষ্ক্রিয়তা: যদি মালিক ১২ বছর ধরে সম্পত্তি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেন বা দখলদারকে সরানোর চেষ্টা না করেন, তাহলে দখলদার সম্পত্তির উপর দাবি করতে পারেন।
প্রমাণ: দখলদারের কাছে সম্পত্তি দখলের প্রমাণ থাকতে হবে, যেমন সম্পত্তির দলিল, জল ও বিদ্যুতের বিল ইত্যাদি। এগুলি প্রমাণ করবে যে দখলদার অবিচ্ছিন্নভাবে সম্পত্তির উপর ছিলেন।
অবিচ্ছিন্ন দখল: সম্পত্তির উপর দখল টানা ১২ বছর ধরে থাকতে হবে। যদি দখলদার মাঝখানে সম্পত্তি ছেড়ে দেন বা অন্য কেউ দখল করে নেন, তাহলে বিরূপ দখলের দাবি দুর্বল হয়ে যাবে।
সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে এই রায় প্রযোজ্য নয়
সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায় মূলত বেসরকারি সম্পত্তির জন্য প্রযোজ্য। তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, এই নিয়ম সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সরকারি সম্পত্তির উপর দখলের পরিস্থিতিতে বিরূপ দখলের নীতিটি কার্যকর হবে না এবং সেক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের আইনি প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হবে।
সম্পত্তি বিরোধের সময় প্রযোজ্য আইন
সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের সময় বেশ কিছু আইনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে অনেক মানুষ এই আইন ও এর বিধি সম্পর্কে জানেন না। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন দেওয়া হলো, যা সম্পত্তি বিরোধে প্রযোজ্য হতে পারে:
ধারা ৪০৬ (অপরাধমূলক বিশ্বাসঘাতকতা): এই ধারার অধীনে, যদি কোনো ব্যক্তি মালিকের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তার সম্পত্তির দখল নেন, তাহলে মালিক অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
ধারা ৪৬৭ (জালিয়াতি): যদি কোনো ব্যক্তি জাল নথি দিয়ে সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করেন, তাহলে এই ধারা প্রযোজ্য হবে।
ধারা ৪২০ (প্রতারণা): এই ধারায় প্রতারণার মাধ্যমে সম্পত্তি দখলের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সম্পত্তি বিরোধ এড়ানোর জন্য সতর্কতা
সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ সাধারণত জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়। তাই সম্পত্তি মালিকদের উচিত কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা:
সবসময় ভাড়াটেদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করুন এবং এর একটি কপি নিজের কাছে রাখুন।
প্রোপার্টি নিয়মিত পরিদর্শন করুন।
কোনো বিরোধের পরিস্থিতিতে দ্রুত আইনি পরামর্শ নিন।