সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আরজি করের নির্যাতিতার বাবা বলেছেন, তাঁকে চাপ দিয়ে একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করেছে পুলিশ। টাকা অফার করার যে অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে তুলেছেন তিলোত্তমার বাবা, তার প্রেক্ষিতে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে তৃণমূল। সেখানে বাবা-মায়ের বক্তব্যে শোনা যাচ্ছে, টাকার অফার করেনি পুলিশ। তৃণমূল নেতারা যখন নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিয়ো পোস্ট করছেন, তখন নির্যাতিতার বাবা জানালেন, ওই ভিডিয়ো আসলে পুলিশ চাপ দিয়ে করিয়েছে। আর সেই ভিডিয়ো নিয়েই সরব হলেন বিরোধী দলের নেতারা।
ঘরে শোয়ানো মেয়ের দেহ। পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে ডিসি নর্থ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। বুধবার রাতে আরজি করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেছেন তিলোত্তমার বাবা। অভিযোগটা ভয়ঙ্কর। তরুণী চিকিৎসকে ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে যখন বাবা-মা দিশেহারা, তখন টাকার ‘অফার’ করল পুলিশ! তিলোত্তমার বাবার এই বক্তব্যে যখন নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই বৃহস্পতিবার সকালেই সেই তিলোত্তমার বাবা-মায়ের একটি ভিডিয়ো সামনে আনল তৃণমূল।
সে ভিডিয়োর সঙ্গে বুধবার রাতের বক্তব্যের কোনও মিলই নেই! তাহলে কোনটা সত্যি? পুলিশ যে টাকা দিতে চেয়েছিল, এই দাবি এই প্রথমবার করলেন না নির্যাতিতার বাবা। ৯ অগস্টের পর অনেককেই এ কথা বলেছেন তিনি। ড. সুবর্ণ গোস্বামী সহ কয়েকজন চিকিৎসক নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বলেছিলেন, পুলিশ টাকা দিতে চেয়েছিল। বুধবার নিজে মুখে সেই কথা বলেন তিলোত্তমার বাবা।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি কলকাতা সারাদিন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নির্যাতিতার বাবা-মা-কে কেউ প্রশ্ন করছেন, “আপনারা নাকি বলেছেন পুলিশ টাকা দিতে চাইছে?” উত্তরে, নির্যাতিতার বাবা বলছেন, “কে বলল। আমরা এরকম কিছু বলিইনি। কীভাবে বলল। এরকম কিছু ঘটেইনি।” আবার প্রশ্ন, “ছিছিছি… তাহলে এটা মিথ্যা গল্প?” উত্তর- “একদম মিথ্যা, বানানো গল্প।” অর্থাৎ ভিডিয়োটি অর্থ হল, তাঁদের টাকার অফার দেওয়া হয়নি। কুণাল ঘোষ সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর তিলোত্তমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে কলকাতা সারাদিন। আসল সত্যিটা কী? তিলোত্তমার বাবা বলছেন, “সেদিন রাতে ভিডিয়ো করে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা যে কিছু বলিনি- এটা বলতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ চাপ দিয়েছিল। বোঝানো হয়েছিল পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বললে তদন্তে অসুবিধা হবে। তদন্তের ক্ষতি হবে। তখনও তো কেসটা পুলিশের হাতেই ছিল। পুলিশ তদন্ত করবে, আবার পুলিশের নামেই বদনাম করব!” তবে রাজনৈতিক দলের কাছে এই ভিডিয়ো কী করে গেল, সেটা জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তারপর কী হল? তিলোত্তমার বাবা-মায়ের বক্তব্য, ‘পরে পুলিশের গতিবিধি দেখে বুঝলাম ব্যাপারটা ওরা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর হাইকোর্ট সিবিআইকে তদন্তভার দিল।’
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও শশী পাঁজা। তাঁদের দাবি মামলায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বিবৃতি জানাক সি বি আই। অগ্রগতি কি কেউ কিছু জানে না ? কিচ্ছু পাইনি সিবিআইয়ের তরফে। বিজেপি বলছে , প্রমাণ লোপাট করেছে ? কি করেছে , কেনো করেছে, কারা করেছে ? সি বি আই জানাচ্ছে না। এই উত্তর জানানোর দাবি জানান ব্রাত্য বসু।অন্যদিকে রাজ্যের অপর মন্ত্রী শশী পাঁজা বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, সিজিও অভিযান করছেন না কেনো? সিবিআই এতো দেরি করছে। উত্তর চাইবেন না কেনো?বিজেপি জাস্টিস চায় না , রাজনীতি করছে। বিল নিয়েও রাজনীতি করছে। মন্ত্রী শশী পাঁজা ভিডিও দেখান, যেখানে নির্যাতিতার বাবা টাকার নেওয়ার কথা অস্বীকার করছেন। মন্ত্রী শশী পাঁজার আবেদন, রাজনৈতিক দল গুলো বাবা মাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “যদি কেউ বুঝতে পারে যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তাহলে সেটা সবার আগে সিবিআই-কে বলা উচিত। এখন তো আর পুলিশ তদন্ত করছে না। কোনও ভয়ের ব্যাপার নেই। যেটা মঞ্চে বসে বলা যায় সিবিআই-এর সামনে বলা হচ্ছে না কেন?”
এবার এই দু ধরনের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তাঁর বক্তব্য, “টাকা? অভিযোগ মারাত্মক। টাকা কিংবা টাকা নয়, দুরকম ভিডিওই প্রকাশ্যে। কৌতূহল, টাকার অভিযোগটা সিবিআইকে দেওয়া বয়ানে ছিল কি না। না থাকলে, কেন এত বড় অংশটা সিবিআইকে বলা হয়নি? আর যদি বলা হয়ে থাকে, তাহলে সিবিআই এতদিনে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে জিজ্ঞাসা করল না কেন?” অর্থাৎ টাকার ‘অফার’ হোক বা না হোক, গোটা বিষয়টিই এখন সিবিআইয়ের তদন্তাধীন বলে মনে করেন তিনি।