শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
ফের একবার এনিয়ে বোমা ফাটালেন শুভেন্দু অধিকারী। দিঘাতে রাজ্য সরকার যে বিরাট কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে সেটা জগন্নাথ মন্দির নাকি জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র? সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছিল বিজেপি। এবার একেবারে নথি দেখিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এই প্রসঙ্গে সরকারি একটি টেন্ডার নোটিশের কপিকে তুলে ধরেছেন।
তিনি টেন্ডারের দু’জায়গা লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছেন । কাজের নাম সংক্রান্ত ওই ঘরে প্রথমে লেখা আছে, ‘সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ- ছোট জলাশয়ের দক্ষিণ পাশের (অংশ) পাকা পথ, রেলিং। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘায় জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের জলাশয়ের সামনে টাইলস এবং ম্যাক্সিকান ঘাসের কার্পেট।’ আর দ্বিতীয় চিহ্নিত জায়গায় লেখা হয়েছে,’পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘায় জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে ০৩ নম্বরে ম্যাক্সিকান গ্রাস কার্পেট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জমি উন্নয়নের কাজ।’
আজ শুক্রবার তমলুক ডিভিশনের এক্সজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের ৭ জানুয়ারী ইস্যু করা ই-টেন্ডার পোস্ট করে শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “আমি বার বার উল্লেখ করছি পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিঘাতে জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র তৈরি করছে। আমার দাবির স্বপক্ষে সরকারি টেন্ডার নোটিশের একটি কপি দিলাম।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে চাপে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেকারণে তিনি জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রকে জগন্নাথ মন্দির হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। কারণ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটারদের তিনি চাইছেন যারা তৃণমূলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন কারণ বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে তাঁদের নরম মনোভাবের জেরে আর তোষামোদের রাজনীতিতে ভারসাম্যের খেলার জন্য। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করছি ভ্রম সংশোধন করে জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রকে জগন্নাথ মন্দির বলে ঘোষণা করুন যদি সৎ হয়ে থাকেন।
এরপর তিনি ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি টেন্ডার নোটিশের কপি সামনে এনেছেন। সেখানে লেখা জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র। এই কপি দেখিয়ে শুভেন্দুর দাবি, আমি তো বার বারই এটা বলেছি।
দিঘাতে জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে গোটা রাজ্য জুড়েই চর্চা। মুখ্যমন্ত্রী একে জগন্নাথ মন্দির বলেই উল্লেখ করেছিলেন। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘খাজা পুরীর একটা বিশেষত্ব। বাংলারও তেমন বিশেষ কিছু জনপ্রিয় মিষ্টি রয়েছে। গজা, ক্ষীরের গজা, গুজিয়া অথবা কালীঘাটের প্যারা। এই সমস্ত কিছুই দিঘায় পাবেন পর্যটকরা। আর তা পেয়ে খুশি হবেন পর্যটকরা। মিষ্টি খেতে কে না ভালবাসে।’
উল্লেখ্য,দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় একটি জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কথা ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালে নিউ দিঘার রেল স্টেশনের ধারে ভোগীবহ্মপুর মৌজায় ২৫ একর জমিতে জগন্নাথ ধাম ও সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। রাজ্য সরকারের তরফে এ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় হিডকোকে। এর জন্য ১৮০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট দিঘার জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। ভিন রাজ্য থেকে পাথর এনে ধাপে ধাপে বসানো হয়েছে। মূল মন্দির-সহ নাট মন্দিরে পড়েছে রঙের প্রলেপ। জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তিও এসে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে পুরীর জগন্নাথ মন্দির দ্বারা অনুপ্রাণিত মন্দিরটি ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, উদ্বোধন করা হবে।