কলকাতা সারাদিন।
ছোটো ছোটো শিশুদের শৈশব চুরি করে…. নচিকেতার এই গানটি বোধহয় ভীষণ রকম প্রাসঙ্গিক সোনারপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজ্য সরকারের অধীনে চলা আইসিডিএস সেন্টারগুলির ক্ষেত্রে।
মাত্র দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে রাজ্যের সমস্ত জেলা শাসক মহকুমা শাসক বিডিও এবং থানার আধিকারিকদের স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছিলেন এলাকার আইসিডিএস সেন্টারগুলি নিয়মিত ভিজিট করতে।
সেই সমস্ত আইসিডিএস সেন্টারে পড়াশোনা হচ্ছে কিনা অথবা খাবারের মান ঠিকঠাক রয়েছে কিনা তা জানার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলেও তা যে এখনো পর্যন্ত খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে এবং তার বাস্তবায়ন এক শতাংশ হয়নি তার প্রমাণ মিলল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর ব্লকের অধীনস্থ সোনারপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মাদসার গ্রামের পাশাপাশি দুটি আইসিডিএস সেন্টারে যাওয়ার পরেই।
হাসানপুর বিদ্যাধরপুর প্রাইমারি স্কুলের বিল্ডিং এর এক কোনায় চলে একটি আই সি ডি এস সেন্টার। দীর্ঘদিন ধরে সেই আইসিডিএস স্কুলে কখনো একটি অথবা দুটি আবার কখনো বা কোন শিশুকে ছাড়াই চলে শিশুশিক্ষার স্কুল। সোনারপুরের ঘাসিয়াড়া থেকে এই আইসিডিএস সেন্টারের দিদিমণি বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সবিতা মন্ডল প্রত্যেকদিন সকালে নিয়ম মেনে স্কুল করার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ গিয়ে কোন শিশুকে পড়াতে দেখা যায়নি। স্কুলের জানলা থেকে ললিপপ চুষতে চুষতে উঁকি মারছে ছোট্ট একটি শিশু আর কালি ধরা হাঁড়িতে চাল ভর্তি করে ভাত বসিয়েছেন আই সি ডি এস সেন্টারের সহকারী। পাশের হাঁড়িতে ফুটছে প্রায় অর্ধেক হাঁড়ি ডিম।
মাত্র একটি ছাত্র স্কুলে কেন তা জানতে চাওয়ায় সহকারী দিদিমনি বা হেল্পার বাসন্তী মন্ডল জানালেন, “চারদিকে এত উৎসব অনুষ্ঠান চলছে যে বাচ্চারা বেশি এসে উঠতে পারে না।” তবে এতগুলো ডিম কেন ফুটানো হচ্ছে একটি বাচ্চার জন্য তা জানতে চাওয়ায় তৎক্ষণাৎ তিনি জবাব দিলেন “একটু পরে এসে দেখবেন সবার বাবা মায়েরা খাবার নিতে চলে আসবে। বাচ্চারা সেই ভাবে স্কুলে আসে না। এমনিতে মোটামুটি আমাদের স্কুলের কিন্তু ৪-৫ জন বাচ্চা আছে।”
এর পরেই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম মাদসার গ্রামের আরেকটি আইসিডিএস সেন্টারে। একটি বাড়ির গলি-ঘুঁজি পেরিয়ে যে ঘরটিতে আইসিডিএস স্কুল চলে বলে পাড়ার লোকেরা জানালেন সেটিকে দেখলে এক ঝলকে গোয়াল বলে ভুল হতেই পারে। স্কুলের রান্নাঘরটিও মোটামুটি খোঁয়াড়ের থেকে খুব বেশি উন্নত স্তরের নয়।
এখানে কি আবার জানা গেল স্কুল শুরু হয় দুপুর ১২.৩০-১ টার পরে।
তবে সাম্প্রতিক অতীতে এই স্কুলে বা আইসিডিএস সেন্টারে কোন বাচ্চাকে স্কুলে আসতে দেখা যায়নি বলেই দাবি প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দাদের। কল্পনা মিস্ত্রি নামে এই আইসিডিএস সেন্টারের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কখন আসেন আর কখন বাড়ি চলে যান তা স্কুলের লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দারাও জানতে পারেন না।
তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দেশের অন্যান্য রাজ্যে আইসিডিএস প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও যেভাবে নিজস্ব কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বেতন দিচ্ছে এবং সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করেছে সেই সমস্ত টাকা যাচ্ছে কোথায়?
সোনারপুরের প্রশাসনিক আধিকারিকরা অথবা স্থানীয় সোনারপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে কখনো সেই ভাবে খোঁজখবর নেন নি বলেই জানা গিয়েছে। তবে গোটা বিষয়টির কথা জানিয়ে সোনারপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রবীন সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান, “এটা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। আমার কাছে তো আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন খবর আসেনি। আপনাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম। আমি খুব তাড়াতাড়ি গোটা বিষয়টা নিয়ে খোঁজ নেব।”
যদিও তৃণমূলের টিকিটে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল জানান, “দিদিমণিরা আমায় জানিয়েছিলেন বাচ্চারা নাকি স্কুলে আসতে চায় না।”