সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর-কাণ্ডের জের! তাই কি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসমিতির বৈঠকে ডাক পেলেন না দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়? কারণ সোমবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটের বাড়িতে কর্মসমিতি বৈঠক ডেকেছেন। ইতিমধ্যেই সকলের কাছে চিঠি পৌঁছে গেছে। কিন্তু এখনও চিঠি পাননি দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। সেই সময় একাধিকবার দলের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। তারপর থেকেই দলের বিরুদ্ধে দূরত্ব বেড়েছিল। যদিও সেই সময়ই তিনি দল ছাড়তে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু সেই সময় তিনি দল ছাড়ার জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। যাইহোক তারপর থেকেই সুখেন্দুশেখরকে দলের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।
রবিবার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নাম না করেই সুখেন্দু শেখর রায়ের আরজি কর সংক্রান্ত মন্তব্য প্রসঙ্গে সাফ বলেন, “দলে থাকলে দলীয় শৃঙ্খলা মানতে হবে। আরজি কর সংবাদমাধ্যমের চাপিয়ে দেওয়া ইস্যু ছিল। রাজ্যের কোনও দোষ ছিল না। তাতে যাঁরা সরকারের সমালোচনা করেছেন, দল তাঁদের পাশে থাকবে না।” তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, পার্টির ডিসিপ্লিন সবার আগে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আরজি করের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমরাও চাই ফাঁসি চাই, জুনিয়র ডাক্তাররাও চাইছেন। কেবলমাত্র কিছু মিডিয়া হাউসের চাপিয়ে দেওয়া বিষয়কে যে সমর্থন করেছে পার্টি তার সঙ্গে থাকবে না।
তবে গোটা আরজি কর পর্বে সুখেন্দুশেখর যে বক্তব্য পেশ করেছিলেন তাতে অস্বস্তি বেড়েছিল সরকারের। অস্বস্তি বেড়েছিল তৃণমূলেরও। আরজি কর পর্বে একের পর এক পোস্ট করেছিলেন সুখেন্দুশেখর। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য একবার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘সিবিআইকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হবে। প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ও পুলিশ কমিশনারের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। কে এবং কেন আত্মহত্যার গল্প ভাসিয়েছিল তা জানা আবশ্যক। কেন হলের দেয়াল ভেঙে ফেলা হল, কারা এই সঞ্জয় রায়কে এত শক্তিশালী হতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল, কেন ৩ দিন পরে স্নিফার কুকুর ব্যবহার করা হয়েছিল। তাদের মুখ খোলা হোক।’ এরপর সুখেন্দুকে লালবাজারে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল পুলিশের তরফ থেকে। তবে তিনি যাননি। পরে ফের রাতেও তলব করা হয়েছিল তৃণমূল সাংসদকে। তখনও তিনি যাননি। আর সেই সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আমি ভয় করব না’ গানটি পোস্ট করেন তিনি।
অন্যদিকে কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দিতে পারেন অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমের জেলা সভাপতির কাছে ইতিমধ্যেই চিঠি পৌঁছেছে। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কালীঘাটের বাড়িতে কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছেন। তাই তৃণমূল নেতা কর্মীদের মধ্যে এই বৈঠক নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। সূত্রের খবর, কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। যারমধ্যে অন্যতম হল সংগঠন। ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই রণকৌশল তৈরি করেই সংগঠনকে ঢেকে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। আলোচনা হতে পারে শীতকালীন অধিবেশন নিয়েও। সোমবার থেকেই শুরু হচ্ছে লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন।
সেখানে তৃণমূলের কী অবস্থান হবে তা নিয়েও আলোচনা হতে পার। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন নিয়েও আলোচনা হতে পারে কালীঘাটের বৈঠকে।
সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংগঠন নিয়ে একটি লিখিত রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। দলকে আরও শক্তিশালী আর সক্রিয় করার উদ্দেশ্যেই সেই রিপোর্ট। তিনি আরও বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা কারণে ব্যস্ত থাকায় সেই রিপোর্ট ও প্রস্তাব কার্যকর করেননি। তবে সেই রিপোর্ট বা প্রস্তাব কার্যকর করা হবে। দলের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনাও হবে। তাই তৃণমূল সূত্রের খবর মমতার ডাকা সোমবারের বৈঠকে সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ঘাসফুল শিবিরে গুঞ্জন।