সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
দলে শৃঙ্খলা আনতে এবার আরও তৎপর তৃণমূল। সোমবার দলের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক থেকে সংসদ, বিধানসভা এবং দলের অভ্যন্তরে তিনটি বিশেষ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গড়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দলের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটিতে এদিন আরও পাঁচ নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হল। এতদিন তৃণমূলেের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিল ২২ জন। এদিন নতুন করে পাঁচজনকে অন্তর্ভুক্ত করার পর এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল ২৭। নতুন পাঁচজন সদস্য হলেন-বিমান, বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়া , মালা রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জাভেদ খান।
কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বলেন, “এই জয় আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সকলকে একসাথে চলতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে পাশে আছি আমরাই।” এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেশ ত্রিপাঠি, অসীমা পাত্র, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বোস, সুব্রত বক্সী, মলয় ঘটক, অনুব্রত মণ্ডল, বীরবাহা হাঁসদা, বুলুচিক বরাইক, অরূপ বিশ্বাস, পার্থ ভৌমিক, সুস্মিতা দেব, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, গৌতম দেব।
জাতীয় কর্মসমিতির চেয়ারপার্সন তিনি নির্বাচনের ফলের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা। বললেন, “মানুষের পাশে আছি,আস্থা আছে। নতুন সংযোজন হল বিমান বন্দোপাধ্যায়,মালা রায়,কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়, মানস ভুইয়া,জাভেদ খান।” মমতা এর পরেই মনে করিয়ে দেন দীর্ঘ পথ চলার গল্প।মমতার কথায়, “হঠাৎ করে দল তৈরি হয়নি। ১৯৯৮ সালে কেন হয়েছিল। সেটা সকলকে জানতে হবে। তাই সকলের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। তিনটি ডিসিপ্লিনারি কমিটি হল। সংসদের কমিটিতে রয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও ব্রায়েন, কাকলী ঘোষ দস্তিদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নাদিমূল হক। বিধা্নসভার জন্য গঠিত ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে রয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায়, নির্মল ঘোষ, দেবাশিস কুমার, ফিরহাদ হাকিম এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। একইভাবে দলের অভ্যন্তরের শৃঙ্খলা দেখার কমিটিতে রয়েছেন সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসু ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
এই কমিটির কথা ঘোষণা করে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে দলের কেউ যখনতখন যা খুশি মন্তব্য করতে পারবেন না। কাউকে তিনবার শোকজের পর সাসপেন্ড করা হবে।” অতীতে বিভিন্ন ইস্যুতে দলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদরা বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন। আর জি কর আবহে চিকিৎসকদের উদ্দেশে শাসকদলের নানা জনের নানা মন্তব্য উঠে এসেছে শিরোনামে। সমালোচনাও কম হয়নি। সেসব রুখে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে এবার শৃঙ্খলায় আরও জোর দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৬ এ বিধানসভা ভোটে দলের পারফরম্যান্স অক্ষুণ্ণ রাখতে এমনই রদবদল করা হল।
মাঝে একটা বছর! ২০২৬ এ ফের অগ্নি পরীক্ষায় শাসকদল তৃণমূল। কার্যত এখন থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের টার্গেট ফিক্সড করে নিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, কোথাও যাতে বিরোধীরা একচুলও সুবিধা যাতে না পায় সেজন্য একেবারে কোমর বেঁধে নামছে চলছে তৃণমূল। সোমবার জাতীয় কর্মসূচির বৈঠক ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই বৈঠক হয়। যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। আর সেই বৈঠকেই একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এমনকি একাধিক ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে প্রবীণদের গুরুত্ব। পাশাপাশি জেলায় জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে বলে।
শুধু তাই নয়, আরও বেশি করে যাতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মানুষের কাছে তা পৌঁছয় সেই নির্দেশও এদিন দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। একই সঙ্গে এদিনের বৈঠকে “মানুষের সাথে, মানুষের পাশে” নামে নতুন একটি কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তবে কবে থেকে এই কর্মসূচি তা দিন এখনও ঠিক হয়নি বলেই জানান তিনি। মনে করা হচ্ছে, ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যেই এহেন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। যাতে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
অন্যদিকে আরজি কর কাণ্ডের পরেই ‘অপরাজিতা বিল’ পাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু আইন হিসাবে এখনও তা বলবত করা সম্ভব হয়নি। এই ইস্যুতে এবার জোরদার আন্দোলনের ডাক শাসকদল তৃণমূলের। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস ৩০ নভেম্বর ব্লকে ব্লকে মিছিল করবে বেলা ২-৪ টে। এমনকি আগামী ১ লা ডিসেম্বর ধর্না, মিটিং ব্লকে ব্লকে করা হবে। এমনকি এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হবে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর সময় চাওয়া হবে। ১৫ জনের প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। যার মধ্যে ৫ জন মহিলা বিধায়ক ও ১০ জন মহিলা সাংসদ। অন্যদিকে রাজ্যপালের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হবে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।