রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ এবং হুঁশিয়ারি সম্পন্ন অমান্য করে জল চুরি চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর ব্লকের বহু জায়গায়।
ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য সোমবার PHE-র জল নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলাশাসক, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। কাজের রিভিউ খতিয়ে দেখতে গিয়ে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশও করেন। সেখান থেকেই কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু পানীয় জলের লাইন বসালেই হবে না বাড়ি বাড়ি যাতে জল পৌঁছে যায় সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অথবা সরকারি পাইপ লাইন কেটে দিয়ে জল ব্যবহারের মোট ৪৪৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে । বেলা ৩ টে পর্যন্ত যে সমীক্ষা হয়েছে, তাতে প্রায় ১৮,২৩০ লোকেশনে সেখানে অপব্যবহার হচ্ছে। কেউ কেটে নিচ্ছে, কেউ নিজের সবজি খেতে নিচ্ছে, সে চাষ করুক আমরা চাই, তাঁকে নিশ্চয়ই আণরা হেল্প করব। তবে অন্য পদ্ধতিতে। কিন্তু খাবার জলের পাইপ কেটে করা যায় না। এটা অন্যায়। এটা করলে তাঁর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস হবে। তাঁকে কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা দয়া করে যাঁরা করছেন তাঁরা করবেন না।’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘পানীয় জল সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে ৩ টে জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আর সবচেয়ে কম অভিযোগ এসেছে কালিম্পং থেকে। এই ধরনের ঘটনায় কোনও সরকারি অফিসার সমঝোতা করলে, তাঁর চাকরি আগে যাবে। সরকার সহ্য করবে না। নিজের এলাকা দেখে অন্য এলাকা বঞ্চিত করলে। সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে।’
২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছানোর টার্গেট রয়েছে রাজ্যের। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ বাড়িতে জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কথা। ইতিমধ্যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজ্যজুড়ে সেই কাজও।
এদিন ডিজিকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কেউ ছাড় পাবে না। জল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেউ বাধা দিতে পারে না। জলের জন্য ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৫৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। আরও ৬৬ হাজার কোটি টাকা আমাদের হাতে আছে। এখনও অনেক মানুষের বাড়িতে জল পৌঁছনো বাকি।’’
সোনারপুর ব্লক এবং সোনারপুর থানার অন্তর্গত সোনারপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের গেটে ঢোকার মুখে গত প্রায় দু’বছর ধরে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের জল নেওয়ার জন্য তৈরি হওয়া জলের ট্যাপ।
অথচ নির্লজ্জভাবে রামচন্দ্রপুর মোড় থেকে শুরু করে সোনারপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস পর্যন্ত মেইন রোডের পাশ দিয়ে যাওয়া জলের পাইপলাইন কেটে রীতিমতো মোটর লাগিয়ে বাড়িতে বেআইনিভাবে জলের লাইন নিয়েছেন এলাকার বহু তৃণমূল নেতা।
শুধুমাত্র তৃণমূল নেতারা নন, তৃণমূল নেতাদের আত্মীয় পরিজনরাও এভাবেই বেআইনিভাবে জলের পাইপলাইন কেটে বাড়িতে ট্যাংক পর্যন্ত মোটরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জল চুরি করছেন রামচন্দ্রপুর, হাসানপুর, মাদসারের মতো গ্রামগুলিতে। এমনটাই অভিযোগ এলাকার বহু বাসিন্দার।
তবে শুধুমাত্র জলের পাইপলাইন কেটে মোটর লাগিয়ে জল চুরি করা নয়, সেই মোটর চালানোর জন্য বহু ক্ষেত্রে বিদ্যুতের কানেকশন নেওয়া হয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের বিদ্যুতের তার থেকে হুকিং করে।
তবে এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি হলেও এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কোন কর্মতৎপরতা চোখে পড়েনি সোনারপুরের পুলিশ অথবা ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে।