সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
“মমতা দিদির আমলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে নবজাগরণ দেখছে বাংলা। বাংলায় বিনিয়োগ করুন। ঠকবেন না। আমাদের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলায় বিনিয়োগ দ্বিগুণ করে আরো ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।” এভাবেই অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বাংলায় বিনিয়োগের জন্য শিল্পপতিদের আহ্বান জানালেন রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানি।
মুকেশ আম্বানি বলেন, “বাংলা পূণ্যভূমি, স্বামী বিবেকানন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে সুভাষ চন্দ্র বসু, সত্যজিৎ রায় থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বাংলায় নবজাগরণ হয়েছে। এখন বাংলা অর্থনীতি ও ব্যবসার দিক থেকে নবজাগরণ দেখছে। আমি দেশের পশ্চিম দিক থেকে এসেছি। সাধারণত বলা হয় যে পশ্চিমদিকটা অর্থনীতি আর ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এবার গ্লোবাল সামিটটা দেখুন। কী অপূর্ব সামিট। মমতাদিদি আপনাকে আন্তরিক ধন্য়বাদ। আমি প্রতিবার এখানে আসি। ২০১৬ থেকে আসছি। ধারাবাহিকভাবে এই সামিট আরও বড় হচ্ছে। আজ বাংলা মানে উচ্চকাঙ্খা, দক্ষতা। মমতাদিদির আওতায় বাংলা মানে বিজনেস। মুখ্যমন্ত্রী যা নির্দেশ দেন সেটাই করে দেখান তাঁর টিম। যেমন সৌরভ বলছিলেন। এটাই হলমার্ক একজন বড় নেতার। আপনার নাম মমতা মানে মায়া, স্নেহ। দিদি আপনার নামের মানে ক্লান্তহীন নেতৃত্ব।”
এখানেই না থেমে মুকেশ আম্বানি বলেন, বাংলাই ছিল জিও-র পথচলার সূচনা। বর্তমানে রাজ্যে ১৩০০টি জিও স্টোর রয়েছে এবং আগামী বছর আরও ৪০০টি স্টোর খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, বাংলায় এআই-রেডি ডেটা সেন্টার স্থাপন এবং দিঘায় কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন গড়ার কথাও জানান তিনি। মুকেশের ভাষায়, “সোনার বাংলার জন্য সোলার বাংলা তৈরিই রিলায়েন্সের লক্ষ্য।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রিলায়েন্সের এই বিশাল বিনিয়োগের জন্য মুকেশ আম্বানি ও তার পরিবারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলার উন্নয়নে রিলায়েন্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতে আরও বিনিয়োগের আশা রাখছেন তিনি।

তবে শুধুমাত্র মুকেশ আম্বানি একা নন, মমতার নেতৃত্বে বাংলায় বিনিয়োগের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। বাণিজ্য সম্মেলনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন বিশিষ্ট শিল্পপতি, সজ্জন জিন্দাল। বাংলা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাকে ইকনমিক পাওয়ার হাউজ বানানোর প্রচেষ্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন। বাংলায় শিল্প গঠনের জন্য তুলনামূলক ভাবে পলিসি গঠন করছেন। বাংলা বরাবর নতুন নতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়। জেএসডাব্লু বাংলায় কাজ করে। আমাদের সিমেন্ট প্লান্ট বাংলায় চলছে। আমরা একদিনও শ্রম দিবস নষ্ট করিনা। শ্রমিক সমস্যা হোক বা অন্য কিছু আমাদের কাজে অসুবিধা হয় না। দুটো মেগা পাওয়ার প্লান্ট আমরা শালবনীতে গড়ব। আমাদের উদ্দেশ্য বাংলায় কাজ করা। জেএসডাব্লু শিল্প পার্ক গড়ছে ২০০০ একর জায়গা নিয়ে। আমরা দুর্গাপুর বিমানবন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কর্ম সংস্থান একটা বড় উদ্যোগ।
বাণিজ্য সম্মেলনে এরপর বক্তব্য রাখেন শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া। তিনি বলেন, “আমার ভাগ্য যে আমি এই বাংলায় জন্মেছি, পড়াশোনা করেছি। আমাদের হোটেল গ্রুপ হেডকোয়ার্টার এখানেই। কলকাতার পাশাপাশি একাধিক জেলায় আমাদের হোটেল আছে। কলকাতা আর বাংলা অত্যন্ত ভালো জায়গা। পূর্ব ভারতের একটা দারুণ মার্কেট । প্রশাসন এখানে সব রকম সাহায্য করে। টাইম রেগুলেটরি প্রসেস কিছু সময় নেয়। তবে সেটা কঠিন কিছু নয়। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে নিজেও যোগাযোগ ও খবর রাখেন। আমাদের সংস্থার তরফে ৫ টি হাসপাতাল গড়া হচ্ছে । কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও হাসপাতাল গড়ার কাজ চলছে। বাংলার সৌন্দর্য সকলে জানেন। সেখানেই আমাদের হোটেল আছে। এছাড়া আগামী চার, পাঁচ বছরে আমাদের একাধিক আবাসনের কাজ চলছে। যা শেষ হয়ে যাবে।”
সম্মেলনে হাজির ছিলেন আইটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পুরী, তিনি বলেন, “খবরের কাগজের প্রথম পাতার বিজ্ঞাপন দেখে চমকে উঠতে হয়। গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে বাংলা। রাজ্যের উন্নয়ন ও সেই সঙ্গে জোড়া বেনিফিট দেখা যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে ভাইব্রান্ট শিল্পক্ষেত্র। আমাদের সংস্থার হেডকোয়ার্টার এখানে। আমরা যে রেসপন্স পাই তা অসাধারণ। সরকারের পলিসি এখন যথেষ্ট ভালো। আমরা এখানে কাজ করছি। সংস্থা ক্রেতাদের কথা ভাবে। এখানে কাজের জন্য শান্তির পরিবেশ রয়েছে। এখানে আমরা বিনিয়োগ করেছি। হোটেল, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এখানে কাজ করি। ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন এআই-রাজারহাটে রয়েছে। এখন গোটা বিশ্ব এই এআই এর দিকে চেয়ে। আগামী দু’বছরে আমাদের হোটেলের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে।’

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে হাজির হয়ে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, “ঝাড়খন্ড থেকে এসেছি আমি। আর ঝাড়খন্ডের সাথে একটা কমন দেওয়াল হল বাংলা। এমন এমন জায়গা আছে যা দেখে বোঝা যায় না বাংলা আর ঝাড়খন্ড আলাদা কোথায়? দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর অতিথি আজ এখানে এসেছেন। ঝাড়খন্ড খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ রাজ্য। দেশ চালাতে আমাদের রাজ্যের ভূমিকা আছে। খনিজ সম্পর্কিত নানা সংস্থার উদ্যোগ আমাদের রাজ্যে আছে। এছাড়া টেক্সটাইল সেক্টরেও আমরা কাজ করি। আমাদের রাজ্যে আপনাদের স্বাগত। আমি চাই আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে।”
এরপরেই হেমন্তের কথায় উঠে আসে পর্যটনের বিষয়। তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ড পর্যটনের জন্য দারুণ। এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে আমরা কাজ করতে পারি না।”
এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভুটানের প্রতিনিধিও। তার কথাতেও শোনা যায় বাংলা বন্দনা। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রয়েছে এই দেশের। আমার মায়ের জন্মস্থান এটি। মমতা দিদি ভুটানের ঘরে ঘরে অত্যন্ত পরিচিত নাম। কৌশলগত কারণে এই সামিট গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যোগাযোগ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বানারহাট-জলপাইগুড়ি রেলওয়ে লিংক। অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ড্রাস্ট্রি। অপ্রচলিত শক্তি প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। ভুটান আর বাংলা ইতিহাস দিয়ে জড়িত। সেই সূত্রে সেতুবন্ধন হবে।”